পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেওয়া সেই প্রসূতি মারা গেলেন
নওগাঁয় এক প্রসূতিকে সিজারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেওয়ার দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে দুবার আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর মৃত্যু হয়েছে তার।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় সুমি খাতুন (৩৫) নামের ওই প্রসূতির। মৃত্যুর খবর জানার পর সুমির পরিবারে ও গ্রামে বইছে শোকের মাতম।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি করেছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
জানা যায়, গত ২০ মে ‘পেটে গজ রেখেই সেলাই, আইসিইউতে প্রসূতি’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনও প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। এর মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুমি।
সুমির পরিবার ও ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে সকালে প্রসবব্যথা শুরু হলে শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেওয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি। সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার আদনান ফারুক।
সিজারের পরই সুমি তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয় তার। পরে ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়। তারপর রাত ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় সুমিকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতেই পরীক্ষা করে জানা যায় সুমির পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে পর দিন ১৬ মে সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করা হয়। এর ১৩দিন পর বুধবার সকালে মারা যান সুমি।
সুমির খাতুনের মা রহিমা বেগম বলেন, অভিযুক্তরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে টাকার অফার দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাতে রাজি হয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন প্রথমে সুমিকে দেখেছিল তখনই বলেছিল এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ নওগাঁতে প্রোপারভাবে সিজারিয়ান করা হয়নি। তার পর যখন সেখানে অপারেশন করা হয় তখন ডাক্তাররা জানায় সুমির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে সামান্য গজ ছিল। যার কারণে শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না।
তিনি আরও বলেন, দুই বার আইসিইউতে নেওয়ার পরও আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেল না। নওগাঁর একতা ক্লিনিকে গরুকে সেলাই করার মত পায়ের হাঁটুর ওপর উঠে সেলাই করেছিল আমার মেয়েকে। সব কিছুই তাদের ভুল চিকিৎসা ছিল। সুমির মত আর যেন কারও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হয়। অভিযুক্ত ডাক্তার, ক্লিনিক মালিক ও এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।