টাইগারদের ‘দিন’ বদলের সুযোগ
১৭ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট। খালেদ মাহমুদ সুজনের যুগ পেরিয়ে টাইগারদের নেতৃত্বের মশাল এখন মুমিনুল হক সৌরভের হাতে। কিন্তু টেস্টে এখনো দিন বদলের লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ধুঁকতে থাকা দলটির এক মাত্র লক্ষ্য নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখা। শুধু তাই নয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ফেরার লড়াই বললেও ভুল হবে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে টাইগারদের। দেশের ১১তম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মুমিনুলের দল ভারতে সিরিজের দুই ম্যাচেই হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। গেল বছর ৫ টেস্টেই হার। সব মিলিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা।
তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টকে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশ দলের দিন বদলের সুযোগ হিসেবেই। আজ শুরু হচ্ছে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। কিন্তু প্রস্তুতি ছাড়া, পিন্ডির ঠাণ্ডা কন্ডিশন আর পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা সবারই জানা। কিন্তু অধিনায়কের বিশ্বাস তারা পারবেন নতুনভাবে সব সাজিয়ে নিতে। মুমিনুল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ম্যাচটি নিয়ে।’
অন্যদিকে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের অভিষ্যৎ নিয়ে আগাম কিছুই বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে আপনার আগাম কিছু বলা মুশকিল। তার ওপর বাইরের দেশে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের পারফরম্যান্স আপ টু দ্যা মার্ক নয়। পাকিস্তানে পারফরম্যান্সটা পুরো পাওয়া কঠিন। কারণ আমাদের এখনকার খেলোয়াড়দের কিন্তু ওখানে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সেক্ষত্রে একটা ম্যাচ বা অন্তত চার-পাঁচ দিনের একটি অনুশীলন সেশন যদি না পাওয়া যায় তাহলে প্লেয়ারদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।’ তবে আশা ছাড়েননি জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘তারপরও আমি মনে করি যে খেলোয়াড়েরা যেহেতু পেশাদার এবং অভিজ্ঞতাও আছে, এমন না যে ৮-৯ জনের অভিষেক হচ্ছে। এদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব।’
কেমন হবে একাদশ! সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম নেই। তবে তামিম ইকবাল আছেন। বাজে ফর্ম থেকেও বের হয়েছেন। সবশেষ বিসিএলে খেলেছেন ৩৩৪ রানের ইনিংস। কিন্তু ইনজুরির কারণে ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম না থাকায় তার সঙ্গে ওপেন করবেন কে! কোচ জানিয়েছেন তার ইচ্ছা তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নামবেন সাইফ হাসান। ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে আছেন এ তরুণ। অধিনায়ক মুমিনুলও অফ ফর্ম থেকে বের হয়ে বিসিএলে সেঞ্চুরি করেছেন। লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল হোসেন শান্তরা মিডল অর্ডারে ভরসা হতে পারেন। লেজের দিকে দলকে সামলানোর ক্ষমতা আছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। কিন্তু বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান মনে করেন রাওয়ালপিন্ডি হবে ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন রণক্ষেত্র। কারণ এখানে কনকনে ঠাণ্ডা ও পেস সহায়ক উইকেট- দুটিই পাকিস্তানি বোলারদের পক্ষে। তাই নিজেদের সেরাটাই দিতে ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুত হতে বলেছেন সাবেক এই অধিনায়ক।
দেশের বাইরে দলের মতো ব্যক্তিগতভাবেও সময় ভালো যাচ্ছে না অধিনায়ক মুমিনুলের। সবশেষ ১৫ অ্যাওয়ে ম্যাচে করেছেন কেবল ১২০ রান, নেই কোনো ফিফটি। বাংলাদেশও ধুঁকছে প্রতিপক্ষের মাঠে। অধিনায়কের নিজের ও দলের লক্ষ্য একই, দেশের বাইরে ভালো করা। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি এই জিনিসটি এখান থেকে শুরু করার জন্য। সব মিলিয়ে আমরা খুব মনোযোগী আছি। আশা করছি, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।’ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বোলারদের চ্যালেঞ্জও কম নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না তিন পেসার ও এক স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে মুমিনুলের দল। সেই ক্ষেত্রে ইবাদত, আল আমিন হোসেন ও রাহীর ওপর পেস বিভাগের দায়িত্ব উঠতে পারে। বাঁহাতি তাইজুলের বদলে তরুণ অফস্পিনার নাঈম হাসান হতে পারে অস্ত্র। কারণ বাউন্সি উইকেটে তার অফস্পিনে বাড়তি সুযোগ থাকবে। ১৭ বছর আগে পাকিস্তানে ৩ টেস্টের প্রত্যেকটিতে হার দেখেছিল বাংলাদেশ দল। সেই দলের সদস্য হাবিবুল বাশার বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক। তিনিও আছেন এবার পাকিস্তানে টিম ম্যানেজম্যান্টের সদস্য হিসেবে। সেবার মুলতানে শেষ টেস্টে মাত্র ১ উইকেটে হার দেখেছিল বাংলাদেশ।