নারীর হজ মাহরাম ছাড়া গ্রহণযোগ্য হবে কি?

0

শুধু হজ নয়, নারীরা মাহরাম ছাড়া কোনো সফর বা ভ্রমণও করতে পারবে না। মাহরাম ছাড়া যেকোন সফরের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। তাহলে এই নিষেধ অমান্য করে কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করেন, তাহলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য হবে?

পুরুষের চেয়ে একটি শর্ত বেশি পালন সাপেক্ষে নারীর জন্য হজ ফরজ। বেশি শর্তটি হলো- ‘মাহরাম’। মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজপালনে বাধ্যবাধকতা নেই। সে যতো সম্পদশালী নারীই হোক না কেন। তবে মাহরাম ছাড়া হজ করলেও তার হজ বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া সফর করা হারাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাফরমানী। কেননা তিনি বলেছেন-
‘নারী কোনো মাহরাম ছাড়া যেন সফর না করে।’ (বুখারি)

অতএব, নারীর ওপর ওয়াজিব হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা এবং কোনো মাহরাম ছাড়া কখনো সফরে বের না হওয়া। অভিভাবক পুরুষদের ওপরও ওয়াজিব হচ্ছে, হজে তাদের নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা, নারীদের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় না দেওয়া, নিজেদের আত্মসম্ভ্রম রক্ষা করা। কেননা প্রত্যেকেই তার পরিবার সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম)

মাহরাম কারা?
নারীর প্রথম মাহরাম হলো- স্বামী। এরপর যাদের সঙ্গে ইসলামি বিধান মোতাবেক দেখা-সাক্ষাৎ করা বৈধ এবং যাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম। ইসলামের পরিভাষায় তারাই নারীর জন্য মাহরাম। এ সব লোকদের সঙ্গে সামর্থ্যবান নারীরা হজে যেতে পারবেন।

হজের জন্য স্বামীর অনুমতি
কোনো নারীর ওপর যদি হজ ফরজ হয় এবং স্বামী ছাড়াও তাকে নিয়ে হজের যাওয়ার মতো মাহরাম থাকে; আর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে হজে যাওয়ার অনুমতি না দেয়, এ ক্ষেত্রে স্বামী অনুমতি ছাড়াই নারী হজে যেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নারীর করণীয় সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসই যথেষ্ট। হাদিসে এসেছে-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য।’ (বুখারি ও মুসলিম)

নারীর হজ পালনে ইমামদের বক্তব্য
১. ইমামে আজম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, নারীর হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- ‘মাহরাম।’ মাহরাম না থাকলে সম্পদ যতই থাকুক না কেন, নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।’ (বাদায়িউস সানা) হাদিসের প্রমাণ-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না।’

এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)

২. ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, ‘নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য ‘মাহরাম’ শর্ত নয়। বরং নারীর হজ পালনে শর্ত হলো- তার (হজে গমনকারী নারীর দীর্ঘ সফরের) নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামবিহীন একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবে।’

হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আদি! যদি তোমার জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন নারী একাকি উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩, ইসলামি আইন বিষয়ের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হেদায়া’য় এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে ওই নারীর হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ছাড়া হজের দীর্ঘ সফর করার কারণে ওই নারী গুনাহগার হবেন।’

৪. আবার কেউ কেউ বলেন, ‘নারীর উচিত মাহরাম পাওয়ার জন্য জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোনো মাহরাম না পান তবে তিনি নিজে হজে না গিয়ে অন্যের মাধ্যমে বদলি হজের ব্যবস্থা করবেন। আর এটাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।’

ইসলামি শরিয়ত কী বলে?
সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বর্তমান সময়ে কোনো নারীর জন্য হজ আদায়ে মাহরাম একান্ত আবশ্যক। কোনো নারীর পক্ষে মাহরাম ছাড়া পর্দা মেনে হজ সম্পাদন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর জন্যই হজে যাওয়া বৈধ নয়। এতে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। হজের সফর দীর্ঘদিনের হয়। এ সফর মাহরাম ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে।

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো নারীর তার নিজের মাহরামের সঙ্গে হজে না যেয়ে মাহরামসহ হজে যাচ্ছেন এমন নারীর সঙ্গে হজে যান। তাদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। অর্থাৎ তারা মাহরাম ছাড়াই হজে যাচ্ছেন বলে ধরে নেওয়া হবে।
এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- ‘কোনো নারী কোনো নারীর মাহরাম হতে পারে না।’

উল্লেখ্য সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রকাশিত ফতোয়ায়ে লাজনায় বলা হয়েছে, `যে নারীর মাহরাম নেই সে নারীর ওপর হজ ফরজ নয়।’ এটা সুফিয়ান সাওরি, হাসান বসরি, ইবরাহিম নাখয়ি, ইমাম আহমদ, ইসহাক, ইবনে মুনজির ও ইমামে আজম হজরত আবু হানিফার অভিমত। আর এটাই সঠিক।’ (ফতোয়ায়ে লাজনা)

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আবদুল্লাহ বিন বাজসহ কয়েকজন বিশ্ববরেণ্য মুফতি এ ফতোয়ায় স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com