কক্সবাজারে ইয়াবা সেবনে দেড় মাসে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কক্সবাজারে ইয়াবা সেবনে পর্যটক শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। অতিরিক্ত মদ পান ও ইয়াবা সেবনে গত দেড় মাসে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন অন্তত অর্ধশত জন।
গত রোববার কক্সবাজার বেড়াতে এসে অতিরিক্ত ইয়াবা খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন আবির রহমান রুমি (২৪) ও তার বন্ধু মোহাম্মদ আরিফিন (২৫)। এদের মধ্যে আবির কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ও আরিফিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। আবিরের বাড়ি ঢাকার মালিবাগে। তিনি ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আরিফিন ঢাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
তার বাসা পুরান ঢাকায়। তারা দুই বন্ধু ২রা ফেব্রুয়ারি বেড়াতে এসেছিলেন কক্সবাজার। দুই বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনাটি প্রকাশ হয়েছে সোমবার।
তাদের অপর বন্ধু মুনতাসির তাহামিদ নিসর্গ বলেন, তারা ৪ বন্ধু মিলে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। শনিবার সকালে আবির ও আরিফিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবির বেশি অসুস্থ হলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। আরিফিন কম অসুস্থ থাকায় তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। গত রোববার সকালে আরিফিন ঢাকায় ও একইদিন দুপুরে আবির কক্সবাজারে মারা যান।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের কারণে অসুস্থ একজনকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে রোগীর শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবির নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
এর আগে ৮ই জানুয়ারি অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে স্বর্ণা রশিদ (২২) নামে এক ছাত্রীর মৃত্যুর হয়। বৃটিশ কাউন্সিলে পড়ুয়া ওই তরুণী ঢাকা চকবাজারের ৭ নম্বর বেগমবাজার এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হারুন-উর-রশিদ পাপ্পুর মেয়ে।
এর আগে ২২শে ডিসেম্বর অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন লাজিম খান (২৫) নামে এক পর্যটক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই পর্যটককে প্রথমে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়াবাসেবী পর্যটক লাজিম পুরান ঢাকার আবুল হাসেমের পুত্র। তিনি ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের ছাত্র।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীর মতোই শত শত শিক্ষার্থী কক্সবাজার ভ্রমণে এসে মাদক সেবনে মত্ত হয়ে পড়েন। এতে অনেক শিক্ষার্থী অকালে হারিয়ে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন সময় তিনি অর্ধশত পর্যটককে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, যারা কক্সবাজার বেড়াতে এসে অতিরিক্ত মাদক সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা নিয়ে অনেকে ভাল হয়েছেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অনেক পর্যটককে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে। আবার অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। মাদকাসক্ত সব রোগীরই সিনটম একই। অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের কারণে সবার শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। রোগীর শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা বেশি বাঁচানো সম্ভব হয় না। আবার দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলা যায়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, অতিরক্ত মদ পান ও ইয়াবা সেবনে কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যুর পর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যে আবাসিক হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি পর্যটকদেরও সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি। বলেন, পুলিশের পক্ষে প্রতিজন পর্যটককে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবার আগে পর্যটকদের সচেতন হতে হবে।