পূর্ববর্তী যুগেও আল্লাহর অনুগত বান্দারা কাফেরদের নির্যাতনের শিকার
সুরা বুরুজ কোরআনের ৮৫তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ২২টি। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফেরদের তীব্র বিরোধিতা ও অত্যাচার-নির্যাতনে যখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলমানরা অতিষ্ঠ, তখন সুরা বুরুজ নাজিল করে আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা দেওয়া হয় যে, পূর্ববর্তী যুগেও আল্লাহর অনুগত বান্দারা কাফেরদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশার নামাজে সুরা বুরুজ ও সুরা তারিক পড়তেন। (মুসনাদে আহমদ)
সুরা বুরুজের ১২-২২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১২)
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ
ইন্না বাতশা রাব্বিকা লাশাদীদ।
নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।
(১৩)
إِنَّهُ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيدُ
ইন্নাহূ হুওয়া ইউবদিউ ওয়া ইউঈদ।
তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন অতঃপর সৃষ্টির আবর্তন ঘটান।
(১৪)
وَهُوَ الْغَفُورُ الْوَدُودُ
ওয়া হুওয়াল গাফূরুল ওয়াদূদু।
তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, প্রেমময়;
(১৫)
ذُو الْعَرْشِ الْمَجِيدُ
যুল আরশিল মাজীদ।
আরশের অধিপতি, মহান।
(১৬)
فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ
ফাআলুল লিমা ইউরীদ।
তিনি যা চান, তাই করেন।
(১৭)
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْجُنُودِ
হাল আতাকা হাদীসুল জুনূদ।
তোমার কাছে সৈন্যবাহিনীর ইতিবৃত্ত পৌছেছে কি?
(১৮)
فِرْعَوْنَ وَثَمُودَ
ফিরআওনা ওয়া সামূদ।
ফেরাউনের এবং সামুদের?
(১৯)
بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي تَكْذِيبٍ
বালিল্লাযীনা কাফারূ ফী তাকযীব ।
বরং যারা কাফের, তারা মিথ্যারোপে রত আছে।
(২০)
وَاللهُ مِنْ وَرَائِهِمْ مُحِيطٌ
ওয়াল্লাহু মিওঁ ওয়ারাইহিম মুহীত।
এবং আল্লাহ এদের অলক্ষ্যে এদেরকে ঘিরে রয়েছেন।
(২১)
بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَجِيدٌ
বাল হুওয়া কুরআ-নুমমাজীদুন।
(কাফিররা অমান্য করলেও এ কুরআনের কোনই ক্ষতি হবে না) বস্তুত এটা সম্মানিত কোরআন,
(২২)
فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ
ফী লাওহিম মাহফূজ।
সুরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. অতিরিক্ত সীমা লঙ্ঘন করলে জালিমরা অনেক সময় দুনিয়াতেই আল্লাহর শাস্তির শিকার হয়। আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে তা থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় থাকে না, তা হয় অত্যন্ত কঠিন। আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই।
২. আল্লাহ সুবাহনাহু ওয়াতাআলা তার অনুগত বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও প্রেমময়।
৩. ফেরাউন ও সামুদ জাতি আল্লাহর অবাধ্যতা ও জুলুমের কারণে ধ্বংস হয়েছে। যুগে যুগে জালিমদের পরিণতি এ রকমই হয়েছে। আমাদের কর্তব্য তাদের পরিণতি দেখে শিক্ষা গ্রহণ করা।
৪. আল্লাহ তার জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়ে বিশ্বজগতের সব কিছু ঘিরে রেখেছেন। সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে।
৫. কোরআন আল্লাহর প্রেরিত সম্মানিত গ্রন্থ। কোরআনকে যথাযথভাবে সম্মান করা আমাদের কর্তব্য। কোরআনের আরেক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আমি কসম করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের, অবশ্যই এটা এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। এটি সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে অবতীর্ণ। (সুরা ওয়াকিয়া: ৭৫-৮০)