উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে জোরাজুরি, ভিডিও করায় ১০ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করার ভিডিও ধারণ করতে গেলে ওই প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নিজ বাড়ির মাদ্রাসা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
গুরুতর আহত হয়েছেন জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, দৈনিক জবাবদিহির জাজিরা প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লা ও বাংলাদেশ সমাচারের রুহুল আমিন। তাঁদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দৈনিক কালবেলার জাজিরা উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম, যায়যায়দিনের উপজেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের জাজিরা প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম রিয়াদ, খবরের আলোর প্রতিনিধি তাহমিদ রাজিব ও দৈনিক খবরপত্রের জাজিরা প্রতিনিধি সাগর মিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজী।
এ উপজেলায় ৬৫টি কেন্দ্রের মধ্যে একটি সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী বাড়ি দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর নিজ বাড়িতে অবস্থিত এবং তিনিই এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।
ওই কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকেরা প্রকাশ্যে ভোটারদের মোটরসাইকেলে ভোট দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন—এমন তথ্য পেয়ে সেখানে যান জেলায় কর্মরত কয়েকজন সংবাদকর্মী। তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ভিডিওধারণ করতে গেলে মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাজ পরিহিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।
তাঁদের বাঁচাতে অন্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে প্রায় ২০-২৫ জন মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর বর্বর হামলা চালান। এতে কমপক্ষে ১০ সাংবাদিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করা হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে যাই। অতঃপর ভিডিও ধারণ করতে গেলে মোটরসাইকেলের ব্যাজ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা বাঁচাতে এগিয়ে আসলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে তাঁদের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। আমরা পুলিশের থেকে সাহায্য চাইলে তাঁরা এগিয়ে আসেনি।’
আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারতে শুরু করে।’