কথা ছিল অল্পদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর টিকা মিলবে, বাস্তবে এর কোনো অগ্রগতি নেই
গত বছরের জুলাইয়ে ডেঙ্গু মহামারি পর্যায়ে পৌঁছালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে ডেঙ্গুর টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সরকার কাজ করছে। অল্পদিনের মধ্যে ডেঙ্গুর টিকা মিলবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাস্তবে এর কোনো অগ্রগতি নেই। দুটি টিকার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে মাত্র।
ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিকা ‘টিভি-০০৫’ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্ট ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কাজ করছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। গত বছর এই টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয় বাংলাদেশে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও এখানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ সংকটে তা আটকে যায়। এখন ভারতে ওই পরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রক্রিয়া শেষ করে এই টিকা বাজারে আসতে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর। জাপানে উৎপাদিত ডেঙ্গুর টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ দেশে এনে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা ভাবা হয়েছিল। এটিরও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে দেশে সহসা মিলছে না ডেঙ্গুর টিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ডেঙ্গুর দুটি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে। একটি ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সানোফির তৈরি ‘ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া’, অন্যটি জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকেদার তৈরি ‘কিউডেঙ্গা’। তবে সব বয়সীকে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে না। ডব্লিউএইচও গত বছর ‘কিউডেঙ্গা’ প্রয়োগের অনুমতি দেয়। বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমুনাইজেশন (নাইট্যাগ) বা টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এখন এই টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে।
‘টিভি-০০৫’-এর প্রথম প্ররীক্ষামূলক প্রয়োগ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হয় বাংলাদেশে। ভারতে তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা চলছে ২০ হাজার মানুষের ওপর। দুই বছর এই টিকার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিপরীতে এই টিকায় যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও ডেঙ্গুর টিকা পরীক্ষায় নেতৃত্বদানকারী রাশিদুল হক বলেন, ‘টিভি-০০৫-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা সফল হয়েছে। তবে অর্থ সংকটে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমরা এখনও অর্থ সংগ্রহের কাজ করছি।’ তাঁর মতে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষটি দেশে করা গেলে এই টিকা দেশেই উৎপাদন ও কম দামে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। এই টিকা বাজারে আসতে আরও অন্তত দুই বছর লাগবে বলে জানান তিনি।
রাশিদুল হক জানান, এই টিকার তৃতীয় ধাপের আংশিক পরীক্ষা হয়েছে ব্রাজিলে। সেখানে ডেঙ্গুর ১ ও ২ ধরন ছড়িয়েছিল। সব বয়সীর মধ্যে এর কার্যকারিতা প্রায় ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর যত টিকা এসেছে, সেগুলোর মধ্যে এটির কার্যকারিতা বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নাইট্যাগ সভাপতি অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জাপানের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে আমরা একটি বৈঠক করব। সবকিছু দেখে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে।’ ‘কিউডেঙ্গা’ ৪ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি। তবে ডেঙ্গুর টিকা ‘টিভি-০০৫’ সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দিন জানান, করোনার টিকার মতোই ডেঙ্গুর টিকা আমদানির অনুমতি নিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত আবেদন করেনি।
ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে তৈরি ডেঙ্গুর টিকার তথ্য সংগ্রহ করছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
-সমকাল