বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ায় আগ্রহ কম বিএনপির

0

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বিএনপি। সামনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকটি আসনেও উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বিএনপিকে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধায় দিয়েছে।

দলের এ অবস্থায় আজ বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসছে। এর আগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন ধানের শীষের উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। গুলশানে বেলা ১১টায় ইমানুয়েল ব্যাংকুয়েট হলে এ সংবাদ সম্মেলন হবে। সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনের পর দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নানা মাধ্যমে কথা বলেছেন দলের নেতারা।

ঢাকা সিটি নির্বাচন দেখার পর এই সরকারের অধীনে সামনের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নেবে কিনা জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে এখনো আমরা বিশ্লেষণ করিনি। সার্বিক দিক বিশ্লেষণের পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, এই সরকারের অধীনে সামনের নির্বাচনগুলোতে কেন অংশ নেবে বিএনপি? আমরা তো ঢাকা সিটি নির্বাচন দেখলাম। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় বলেছিÑ খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে অংশ নিয়েছি। এবার কী বলব? এই নির্বাচন কেমন হয়েছে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, দেশবাসীও দেখেছেন। এর পরও বিএনপি নির্বাচনে গেলে তো একটা ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আবার না গেলে তারও ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আমরা কী করতে চাই, তাও নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে। নির্বাচন বর্জন করে শুধু চুপচাপ বসে থাকব সেটিও ঠিক হবে না। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপি। এ কারণে উভয় সংকটে পড়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, যদি এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার আগে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে দলটি।

ঢাকা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিলে নিজ চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সিটি ভোটে কম ভোট পড়ার মাধ্যমে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর দেশের জনগণ ও যুবসমাজ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। নির্বাচিত মেয়ররা মাত্র ৫-৭ শতাংশ মানুষের রায় পেয়েছে। বাকি ফল ইভিএমের জালভোট। বর্তমান সরকারের আমলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।

২০-দলীয় জোটের নেতারা বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের এখনই সঠিক সময়। বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ভোট ‘কারচুপি’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেতাকর্মীসহ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনরা পুরো ভোটকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করেছে। সেখানে বিএনপি কীভাবে প্রতিরোধ গড়বে। এ জন্য যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি থাকা দরকার তাও নেই। এ অবস্থায় এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আর সম্ভব নয়।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি মধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের আস্থাহীনতা রয়েছে। অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই সিনিয়র নেতাদের সমালোচনা করেন। ঢাকা সিটি নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশার ভোট আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদে বিএনপি ২ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করে। দলের নেতারা বলেন, হরতাল সফল করতে যে পরিমাণ প্রস্তুতি দরকার ছিল, তা দলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। এ কারণে প্রায় চার বছর পর হরতাল ডাকলেও তা তেমন পালন হয়নি। যদিও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণ বিএনপির ডাকা হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করেছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com