বাজেটে আ.লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিফলন ঘটেনি: সিপিডি

0

জেটিভি রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার প্রতিফলন ঘটেনি বাজেটে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এমনটাই মনে করে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বিত্তশালীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

‘অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য ন্যাশনাল বাজেট ফর ২০১৯-২০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে সিপিডি। রবিবার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেক শোরে আয়োজিত বাজেট সংলাপে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বিএনপির স্থায়ী কসিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মোকাব্বির খান, বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার, ব্যবসায়ী নেতা এম আকরাম, তাবিদ আউয়াল, মনজুর আহমেদ, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিপিডির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাজেটের সব ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ইশতাহারে কৃষকদের বন্ধকমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাজেটে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
সিপিডি বলছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাজেটের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, অথচ ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে তা ছিল ১২ শতাংশ।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও তাতে কোনও নতুনত্ব নেই বলে সিপিডি মনে করে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, সেই হারে জিডিপি বাড়ছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে।
বাজেট বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে কৃষিবীমা চালুর উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

‘আমরা জনগণ দেখি মাঠে-ঘাটে’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘মাঠের মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা দেশের জনগণ দেখেন লেক শোর হোটেলে। আপনারা সেখানে বসে চা-কফি খান আর বাজেট বিশ্লেষণ করেন। আর আমরা জনগণ দেখি মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায়, হাটে-বাজারে। আমরা সেখানে বসে জনগণের সঙ্গে বাজেট নিয়ে ডিসকাস করি।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন। এ জন্য অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আপনারা যা-ই বলেন, দেশে বর্তমানে হতদরিদ্র মানুষের হার ৫ শতাংশের বেশি নেই। সেই হিসাবে দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ লাখ।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘সর্বস্তরে বৈষম্য দূর করাই শেখ হাসিনা সরকারের মূল লক্ষ্য। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কর্মসূচির পাশাপাশি বরাদ্দ বাড়নো হয়েছে বাজেটে। মানুষকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা করছে সরকার। এর মাধ্যমেই বৈষম্য দূর করা সহজ হবে।’ ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘সিপিডির বিশ্লেষণে আমরা সমৃদ্ধ হই। তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পানিভর্তি গ্লাসের অর্ধেক খালি না দেখে অর্ধেক পূর্ণ দেখলে জাতি উপকৃত হবে। এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও আগামী বছর হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছে। সরকার পাইলট আকারে শস্যবীমা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ৯ বছর পর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে। ৭ বছর পর ভ্যাট আইন চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে সরকার দেশের শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com