রোজাদার ব্যক্তিরা যেসব ভুল করে রমজানে

0

ধর্মীয় বিধি-বিধানের বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় রোজাদার ব্যক্তিরা অনেক ভুল করে থাকেন। তারা জানে না, কীসে রোজা নষ্ট হয় আর কীসে রোজার ক্ষতি হয়। আবার অনেকেই জানেন না, রোজা পালনের সময় কোন কাজ সুন্নত, কোন কাজ জায়েজ, কোন কাজ ওয়াজিব, আর কোন কাজ হারাম?

গীবত, পরনিন্দা

রমজানে অনেক রোজা পালনকারী এমন পাপকাজে লিপ্ত হয়, যা তার সিয়াম-কিয়াম বরবাদ করে দেয়। যেমন- গীবত, পরনিন্দা, চোগলখুরি, অশ্লীল কথা-বার্তা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, অন্যায় অভিশাপ-ইত্যাদি।

খাবারের অপচয়

রমজানে সবচেয়ে মারাত্মক যে-ভুলটি কমবেশি সবাই করে থাকে তাহলো খাবারের অপচয়। কারণ, সেহরি ও ইফতারে প্রায় ঘরেই দুই-চারজন মানুষের জন্য পাঁচ-দশ পদের খাবারের ব্যবস্থা করতে দেখা যায়। এতে ফল যা হবার তাই হয়। কিছু অংশ খাওয়ার পর বাকি অংশ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। অথচ চাইলে এই খাবার দিয়ে-ই ছোটবড় একাধিক পরিবারের ক্ষুধা নিবারণ করা যেতে পারে এবং তাদের জন্য তৃপ্তিদায়ক সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা যায়।

মহান আল্লাহ অপচয়কে ইসলামের নীতি-বিরুদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন-

‎كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِين‬‎

আর তোমরা খাও এবং পান করো; কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ, আয়াত: ৩১)

এই আয়াত থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের মৌলিক চাহিদা ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা ঘৃণিত ও নিষিদ্ধ অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এ অপচয়ে মহান আল্লাহ ভীষণ রুষ্ট হন এবং অপচয়কারীকে হতভাগ্য শয়তানের অনুচর হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,

‎‫وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا* إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا*‬‎

তোমরা অপচয় কোরো না। কারণ, অপচয়কারীগণ শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইসরা, আয়াত: ২৬-২৭)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-

‎‫وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا‬‎

আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় যেমন করে না তেমনই কৃপণতাও করে না; বরং তাদের ব্যয় হয় এতদুভয়ের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ। (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৬৭)

দরিদ্র প্রতিবেশির প্রতি খেয়াল না করা

রমজান মাস এলেই দেখা যায়, হাট-বাজার ক্রেতায় ভরে যায়। প্রত্যেকেই এতো বেশি খাদ্য-পানীয় ক্রয় করে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় দশটি-দশটি পরিবারে জন্য যথেষ্ট। অথচ তাদের প্রতিবেশী কত পরিবার ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট করছে। এক টুকরো বাসি রুটি দিয়ে সেহরি-ইফতার সেরে নিচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে ক্ষুধা নিয়ে ফুটপাতে শুয়ে পড়ছে।

অথচ রোজার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো, কম খাওয়ার মাধ্যমে পাকস্থলীর দূষিত পদার্থসমূহ বের করে দেওয়া। যারা পানাহারের ক্ষেত্রে এভাবে অপচয় করে এবং প্রয়োজন বা সাধ্যের অতিরিক্ত খাওয়ার চেষ্টা করে আদৌ কি তাদের এ উদ্দেশ্য অর্জিত হবে?

রোজা রেখে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটা

রোজা পালনকারীদের মাঝে অনেকেই এমন আছেন যারা সারা দিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। তাদের দেখে মনে হয়, তারা যেন রোজাই রাখেনি। অনেকে তো শুধু নামাজের সময় জাগে। নামাজ পড়েই আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবে ঘুম ও অবহেলায় সারা দিন পার করে দেয়। আর সারা রাত আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকে।

রোজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হিকমত ও উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষুধা-পিপাসার স্বাদ আস্বাদন করা। যারা সারা দিন ঘুমের ঘোরে কাটিয়ে দেয়, তারা কি সেই আস্বাদ অনুভব করতে পারে?

খেলাধুলা-অহেতুক কাজে ব্যস্ত থাকা

অনেক সিয়াম পালনকারী আবার সারা দিন মাকরুহ বা হারাম খেলা-ধুলায় মত্ত থাকে। যেমন-দাবা, পাশা, তাস, ফুটবল-ইত্যাদি। তারা এসব খেলাকে আত্মপ্রশান্তির কারণ ও আনন্দময় অবকাশ যাপনের মাধ্যম মনে করে। তাদের এই কাজ-কর্মের ব্যাপারে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন-

‎‫لَا تُرْجَعُونَ‬‎ ‎‫أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا‬‎

তোমরা কি মনে করো যে, আমি তোমাদের অনর্থক সৃষ্টি করেছি, আর তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না? (সূরা মুমিনুন, আয়াত: ১১৫)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

‎‫وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِبًا وَلَهْوًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا‬‎

আপনি তাদের কথা ছেড়ে দিন, যারা তাদের দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং যাদের পার্থিব জীবন প্রবঞ্চিত করেছে। (সূরা আনআম, আয়াত: ৭০)

নামাজ- ইবাদত ছাড়া অযথা রাত জাগা

অনেকে রোজার মাসে অযথা রাতে জেগে থাকে। অনর্থক খেল-তামাশায় সময় নষ্ট করে। শপিংমল, রাস্তা-ঘাট ও পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়; কিন্তু দুই মিনিট সময় ব্যয় করে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে না।

জামাতে নামাজ আদায় না করা

অনেকে তো আবার এরচেয়েও মারাত্মক ভুল বা অপরাধে লিপ্ত হয়। সামান্য ও তুচ্ছ কারণে জামাতে নামাজ আদায় করা থেকে পিছিয়ে থাকে। অথচ তারা নিজেরাও হয়তো জানে, এটা স্পট মুনাফিকের আলামত এবং অন্তরের ব্যাধির আলামত ও আত্মার অপমৃত্যুর প্রমাণ।

রমজানে কোরআন তিলাওয়াত না করা

এমন অনেক রোজাদার আছেন, রমজানে কোরআনের সঙ্গে যাদের দূরতম সম্পর্কও থাকে না। জাগতিক অনেক কিছুই হয়তো পড়ে: কিন্তু একবারের জন্যও কোরআন খুলে দেখার সময় পায় না। অনেকে আবার এমনও আছেন, এই দয়া ও উদারতার মাসেও তাদের হৃদয়ে দয়ার উদ্রেক হয় না। ভেতরে সদকার প্রেরণা জাগে না।

অনেক রোজাদার রোজা রাখলেও তারাবির নামাজ পড়ে না। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, তারা বলতে চায়, ‘ফরজ আদায় করাই তো যথেষ্ট’। অথচ ধর্মীয় ক্ষেত্রে অল্পেতুষ্ট লোকগুলোই এই দুনিয়ার ক্ষেত্রে মোটেও অল্পেতুষ্ট হয় না বরং সব সময় উন্নতি ও সমৃদ্ধির চিন্তায় বিভোর থাকে।

নারীদের ওপর কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া

অনেকে স্ত্রী বা পরিবারের অন্যান্য নারীদের বিভিন্ন ধরনের খাবার-পানীয় প্রস্তুত করার আদেশ দিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত রাখে যে, আগ্রহ থাকলেও তারা কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির এবং অন্যান্য নফল ইবাদত পালনের অবসরই পায় না। অথচ পরিবারের কর্তাব্যক্তিগণ যদি সেহরি ও ইফতারের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় খাবার তৈরিই যথেষ্ট মনে করেন, তাহলে পরিবারের নারী সদস্যরাও আল্লাহর ইবাদত ও দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহের সুযোগ পেতেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com