দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণের দায় জনগণের ওপরে চাপানো হতে পারে: ওয়েবিনারে বক্তারা

0

দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে সবল ব্যাংকের মার্জার (একীভূত) করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে নানান অনিয়মে নাজুক পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করতে গভর্নরের উপস্থিতিতে চুক্তি করেছে শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক। তবে ব্যাংক একীভূত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনায় ৬ দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন উন্নয়ন ও অর্থনীতি গবেষক অধ্যাপক জিয়া হাসান। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণের দায় ট্যাক্স পেয়ার বা দরিদ্র জনগণের ওপরে চাপানো হতে পারে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

শনিবার (২৩ মার্চ) ফোরাম ফর বাংলাশে স্ট্যাডিজ আয়োজিত ‘বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মত দেন তিনি।

সাংবাদিক মুনির হায়দারের সঞ্চালনায় আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদ খাতুন, সিডনি পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের আন্তর্জাতিক পরিচালক অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, অর্থনীতিবিদ ও আইএলও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ, গবেষক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

অধ্যাপক জিয়া হাসান বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের যে সিদ্ধান্ত সেটা ভালো। তবে এক্ষেত্রে উচিত ছিল দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূত করা। একইভাবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে ভালো ব্যাংকের একীভূত করা। এখন দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হলে সেটার (ভালো) অবস্থাও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খারাপ ব্যাংকের অনেক দায় রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের খারাপ ঋণ রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণের দায় চূড়ান্তভাাবে ট্যাক্স পেয়ার বা দরিদ্র জনগণের ওপরে চাপানো হতে পারে। মূল্যস্ফীতি ছাড়া এত বড় অংকের দায় দেশের অর্থনীতি নিতে পারবে না।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি কমানো ও সুশাসন ফেরাতে একটি পলিসি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকের প্রধান সংকট অনিয়ম ও লুপটাপের কারণে খেলাপির প্রভাব ও রাজনীতির সখ্যতায় খেলাপি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে যেটুকু প্রস্তাব আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একীভূত চাপানোর মাধ্যমে হবে গরীবের ওপর এসব ঋণের দায় চাপানো। দুর্বলের সঙ্গে সবলের মিলিত হওয়ায় আরও দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবল ব্যাংকের। খেলাপি ঋণ লুকানোর কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আবার মার্জার সামনে এলো। তথ্য বলছে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। খেলাপির কারণে ব্যাংকগুলোর সংকট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ লাখ কোটি টাকার তারল্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর কারণ খেলাপি ঋণ।

উন্নয়ন অর্থনীতির এ গবেষক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক একীভূতকরণে ছয়টি দুর্বল দিক রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো প্রস্তুতি নেই, এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করেছে। ব্যাংকের সংখ্যা কমানো কার্যকরী লক্ষ্য হতে পারে না, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল কনসোলিডেশন (একত্রীকরণ)। দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণের দায় চূড়ান্তভাবে দরিদ্র জনগণের ওপরে চাপানো হতে পারে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার একই ধরনের প্রডাক্ট পোর্টফোলিও এবং ভৌগলিক ভিন্নতা না থাকা ব্যাংকের কোনো স্ট্র্যাটেজিক ভ্যালু নেই।

অধ্যাপক জিয়া হাসান আরও বলেন, পদ্মা ব্যাংকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাড লোনে পরিণত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ছাড়া এত বড় অংকের দায় অর্থনীতি নিতে পারবে না। জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে ব্যাংক বেশি, এটা ঠিক। তবে মানে এখন আবার ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রস্তাব যৌক্তিক হতে পারে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com