উপজেলা নির্বাচন: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলেই বহিষ্কার

0

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ কিংবা উত্তাপ নেই বিএনপিতে। দলের প্রার্থী হতে চান এমন নেতাকর্মীর নেই আনাগোনা। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি– এমন সিদ্ধান্তে এখনও অটল দলের হাইকমান্ড। পদ-পদবি ব্যবহার করে কেউ নির্বাচন করলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে– এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে। অবশ্য মামলা-মোকদ্দমার চাপে জর্জরিত তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বর্তমান ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’র মধ্যে নির্বাচনে যেতে তেমন আগ্রহী নন।

দলের নেতারা জানান, বিএনপির কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল নেতাকর্মীর নাজুক অবস্থা। সম্প্রতি আড়াই মাসের আন্দোলনে মামলা-হামলায় প্রত্যেকে বিপর্যস্ত। অনেকে এখনও বাড়ি যেতে পারেননি। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো আগ্রহ নেই বলে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেন, দলের অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থকষ্টে আছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আরেকটি ‘একতরফা’ নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে যাওয়ার মতো অবস্থা তাদের নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়ালি বৈঠকে তৃণমূল নেতারা এমন মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। যারা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দলের শীর্ষ নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, তারা এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন না বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেখানে তারা অটল রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচনী খেলায় অংশ নেওয়ার কোনো মানে নেই। এ ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ জনগণও আগ্রহ হারিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দলের কেউ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এটিই তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতীতের মতোই এসব নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিএনপি নেতারা জানান, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। এ জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। এ আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন, পঙ্গু হয়েছেন। মিথ্যা মামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির আহ্বানে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন দেশের মানুষ বর্জন করেছেন। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে গেলে জনমনে একটা ভুল বার্তা যাবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে– এমন কথা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ এই সরকার ভোট ডাকাত, তা অনেকবার প্রমাণ করেছে। যে কারণে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারা আন্দোলন করছেন। তাদের নির্বাচন বর্জনের ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে যাননি। অবৈধ ডামি সরকার ও অবৈধ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপিসহ কোনো গণতান্ত্রিক দল আগামী দিনে উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে না।

জানা গেছে, ২০২১ সালের মার্চের পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বিএনপি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দলটি। যাদের বেশির ভাগ নেতা নিজেদের ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার আবেদন করেও ফিরতে পারছেন না।

বিএনপি নেতারা বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন আর ভোটকেন্দ্রে যায় না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে আগে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তা ছাড়া সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এখন উপজেলা নির্বাচনে গিয়ে যেমন জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই, তেমনি তাদের আন্দোলনের মূল দাবি দুর্বল হয়ে পড়বে।

সূত্র: সমকাল

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com