পূরণ হলো তামিমের অধরা স্বপ্ন
এক যুগের উপর রেকর্ডটির একক মালিক ছিলেন রকিবুল হাসান। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে গতকাল রবিবার দেখলেন আরেকটি ট্রিপল সেঞ্চুরি। দেখলেন তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নতুন এক ইতিহাস রচনা।
দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল বিসিএলের তৃতীয় দিনে ইসলামী ব্যাংক ইস্ট জোনের হয়ে খেলেছেন ৩৩৪ রানের হার না মানা ইনিংস। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। অবিশ্বাস্য ইনিংসটি বাঁ হাতি তামিম খেলেন অসীম ধৈর্যের মূর্তি হয়ে। ৫৮৫ মিনিট স্থায়ী ৪২৬ বলের ৪২ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ৩৩৪ রানের ইনিংসটি খেলার পর তামিম জানান, স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শনিবার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন। অপরাজিত ছিলেন ২২২ রানে। তখনই ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বপ্ন দেখতে থাকেন দেশের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরির। যদিও দেশসেরা ওপেনারের মনের গহিনে ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বপ্ন উঁকি দেয়নি। তারপরও গতকাল রবিবার তৃতীয় দিন হিমালয়সম দৃঢ়তায় ব্যাটিং করে ইনিংসটি টেনে নিয়ে যান ৩৩৪ রানে।
পৌনে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী ইনিংসটি খেলার পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে তামিম বলেন, ‘ট্রিপল সেঞ্চুরির অনুভূতি অবশ্যই স্পেশাল। স্বপ্ন সবারই থাকে। আমারও ছিল। কিন্তু এই ম্যাচেই হয়ে যাবে, ভাবিনি।’ পাকিস্তানের মাটিতে রাওয়ালিপিন্ডি টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে দুরন্ত ফর্ম নিয়ে খুশি বাঁ হাতি ওপেনার। তিনি বলেন, ‘রেকর্ড গড়ার চেয়েও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যেভাবে আমি ব্যাটিং করেছি, সেটা নিয়ে। আমি আশা করি এই ফর্ম আমি ধরে রাখতে পারব।’
২৯৯ থেকে ৩০০ রানে পৌঁছাতে খুব বেশি বল খরচ করেননি। শুভাগত হোসেনের বলকে শর্ট স্কয়ার লেগে ঠেলে ঠাঁই নেন রেকর্ড বইয়ে। ৩০০ রানের মাইলফলক গড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাভার থেকে ছুটে আসেন দীর্ঘ ১৩ বছরের ট্রিপল সেঞ্চুরির একক মালিক রকিবুল। এসেই হাত ছুঁয়ে, পিঠ চাপড়ে অভিনন্দন জানান তামিমকে। দেশের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরির ইনিংসটি থামে ৩৩৪ রানে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন ৪০৭ বলে ৪০ চারে। পরের ৩৪ রান করেন ১৯ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে। ইস্ট জোনের অধিনায়ক মুমিনুল হক যদি ইনিংসটি ঘোষণা না করতেন, তাহলে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে কোয়াড্রপোল (৪০০) সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়তেন তামিম।
তার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ভর করে সেন্ট্রাল জোনের বিপক্ষে ২ উইকেটে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ইস্ট জোন। জবাবে সেন্ট্রাল জোন দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১১৫ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছে। প্রথম ইনিংসে সেন্ট্রাল জোনের সংগ্রহ ছিল ২১৩। ইতিহাস গড়া ইনিংসটি খেলার পথে তামিম গড়েছেন বেশ কয়েকটি রেকর্ড। টপকেছেন রকিবুল হাসানের ৩১৩ রান। গড়েছেন এক ইনিংসে সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ড। চট্টগ্রামে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সাউথ জোন। তৃতীয় দিনে শাহরিয়ার নাফিস ১১, শামসুর রহমানের ১০৯ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৭০ বলে ১০০ রানের ভর করে ৩ উইকেটে ৩৯৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে সাউথ জোন।