লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে একটি সরকারকে হঠাবে, সেই রাজনীতি বিএনপি করে না: মঈন খান
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে একটি সরকারকে হঠাবে, সেই রাজনীতি বিএনপি করে না। তিনি বলেন, মানুষজন বলছে আমরা এই সরকারকে হঠাতে পারিনা। এর জবাব হচ্ছে, আমরা তো এই সরকারের মতো লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) হঠকারী সন্ত্রাসী রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা কতগুলো সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, মিছিল ও অনশন কর্মসূচি দিয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা কোনো দিন লগি-বৈঠা দিয়ে এই সরকারকে আক্রমণ করি নাই এবং করবো না। কেননা বিএনপি সাংঘর্ষিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী না।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে সরকার হুমকি দিচ্ছিল, বিএনপি যদি শান্তি ভঙ্গ করে তাহলে এবার আর রক্ষা নাই। আপনারা দেখেছেন আমরা সমাবেশ করেছি লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে, বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ হয়েছে। তখন তারা নিজেরাই হরতাল পালন করেছে। গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছিল, সরকারি ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তারা কোনো নীতিতে বিশ্বাসই করে না।
আওয়ামী লীগ গত এক বছর যাবত বিএনপিকে উসকানি দিয়ে গেছে মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, যারা আজকে নির্বাচন বর্জন করেছে সরকার তাদের বারবার উসকানি দিয়েও ভুল পথে নিতে পারেনি। এরপর তারা গত ২৮ অক্টোবর একটা নাটক সৃষ্টি করে নিরীহ শান্তি প্রিয় মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বুলেট মেরেছে, গ্রেনেড মেরেছে, টিয়ার গ্যাস মেরেছে। বিএনপি তথা বিরোধীদের আমি অনুরোধ করব, আপনারা সতর্ক থাকবেন।
বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আজকে প্রকাশ্য বলে গেলাম আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। বিএনপির রাজনীতি করে জনগণের সেবা করার জন্য। বিএনপি রাজনীতি করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা কোনো ব্যক্তির জন্য নয়।
দুই মাসে ২৫ হাজার বিএনপি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা মানে তো সে অপরাধ করেছে, বিষয়টা এমন না। কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে মামলা কোর্টে শুনানি হবে, তার বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। তার আগে কেন ২৫ হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হবে? আমাদের সেক্রেটারি জেনারেলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে? গত দুই মাসে তিনশোর মতো মামলা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি একটি সিডিউল ঘোষণা করেছে। সিডিউল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য একটি দিন ধার্য করেছিল। সেই দিন ধার্যের আগের ১-২ সপ্তাহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্যে। আশা করি আপনারা সেটি লক্ষ্য করেছেন। গরুর হাটে যেমন গরু ছাগল কেনাবেচা হয়, ঠিক সেভাবে নির্বাচনের প্রার্থী কেনাবেচা হয়েছে। এটি হচ্ছে লজ্জা এবং কলঙ্কের।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। এছাড়া সমমনা জোটের অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।