ভিন্ন পদ্ধতিতে একই কায়দায় ভোট!
ব্যালট পেপার থেকে ইভিএম মেশিনে পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো পরিবর্তন হয়নি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ নং ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ভোট চলছে অতীতের মতো একই কায়দায়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, এজেন্ট বের করে দেয়া, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে না দেয়া, কেন্দ্রের বাইরে মহিলা আর বহিরাগতদের উপস্থিতি সবই ছিল এসব ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে। পাশাপাশি দেখা গেছে ভোটারদের অনাগ্রহ আর ফিঙ্গারিং নিয়ে ভোটার বের করে দিয়ে এজেন্টরা মিলে ভোট কাস্টিং করে নেয়ার চিত্র।
সকাল পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নং ওয়ার্ডের ডুমনি উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শরিফুল ইসলাম ও মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিচ্ছেন বিপক্ষ দলের চিহ্নিত ভোটারদের। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আক্তার হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির হোসেনের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি ভোটকেন্দ্রে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির কারণে পুলিশের পরিদর্শক সাহিদুর রহমান এজেন্টদের কর্তব্য পালনের সুযোগ করে দেন। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা দফায় দফায় মহড়া দেন। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ৪০ নং ওয়ার্ডের ছোলমাইদ এমদাদুল উলুম মহিলা মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তাবিথ আউয়ালের এজেন্ট ফাতেমা বেগম ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আতাউর রহমানের এজেন্ট শাহানা আক্তারকে পুলিশের সহায়তায় কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন খোদ প্রিসাইডিং অফিসার মো. শাজাহান।
তার দাবি এজেন্টদ্বয় নির্দিষ্ট সময়ের পরে দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩৯ নং ওয়ার্ডের নুরেরচালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪টি কেন্দ্রে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পড়লেও বেলা ১১টার মধ্যে ফাঁকা মাঠে ভোটপড়ে ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রগুলোর বাইরে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেলেও সে ওয়ার্ডের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ভিতরের অবস্থা ছিল ভোটারশূন্য। সবগুলো বুথে ছিল না বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট। এ ব্যাপারে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খান অভিযোগ করেন বহিরাগত লোকজন এনে সরকার দলীয়প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রভাব সৃষ্টি করছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৪২নং ওয়ার্ডের একেএম রহমত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্রে সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কর্মীদের সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহীপ্রার্থী আইয়ুব আনসার মিন্টুর কর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে অন্তত ১৫-১৬ জন আহত হলেও সারোয়ার, নাইম, সোলাইমান ও শফিকের নাম জানা গেছে।
অপরদিকে একই ওয়ার্ডের বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে এ দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এখানে বিএনপির কোনো এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর লোকজন নিয়ে কয়েকজন নারী ভোটারদের বের করে দিতে চাইলে মহিলাদের সঙ্গে ব্যাপক বচসা বাধে তাদের। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ কেন্দ্রে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ দিনব্যাপী দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ৪১নং ওয়ার্ডের দ্বীন মোহাম্মদ বালিকা দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় পুরুষ বুথ ভোটারশূন্য হলেও মহিলাদের দীর্ঘ সারি। অন্যদিকে কেন্দ্রের ভিতর ভোট দিতে যাচ্ছেন না কেউ।
একজন নারী ভোটারের কাছে এ প্রতিবেদক তার ভোটার নাম্বার জানতে চাইলে সেখান থেকে ১৫-১৬ জন নারী দৌড়ে কেন্দ্র ত্যাগ করে। স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর দাবি সাংবাদিকদের উপস্থিতি আর ভালো পরিবেশ দেখানোর জন্য মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসমালের লোকজন এই ভুতুড়ে লাইনে লোক দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। বিকাল ৩টার দিকে ৩৯নং ওয়ার্ডের খিলবাড়িরটেক এলাকার রাজধানী পাইলট স্কুলের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় লোকে লোকারণ্য অথচ ভিতরে নেই কোনো ভোটার। সে এলাকার এক স্কুলশিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিএনপির লোকজন যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে এ কারণে বাইরে অবস্থান নিয়েছে সরকারদলীয় সমর্থকরা। এদিকে প্রায় সব ভোটকেন্দ্রেই ঘটেছে ইভিএম ব্যাঘাত। বারবার মেশিন অচল হয়ে পড়ছিল বেশকয়েকটি ভোটকেন্দ্রে। অবশ্য কেন্দ্রভিত্তিক সেনাবাহিনীর দক্ষ টেকনিশিয়ান থাকায় সে সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়।