ভারতের বাজেট চমক: মধ্যবিত্ত হতাশ অর্থমন্ত্রী অসুস্থ
সংসদে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে গতবার ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট নিয়েছিলেন। এবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে সেই রেকর্ড ভাঙলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
কিন্তু তাকে দুই পৃষ্ঠা বাকি রেখেই ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় বক্তৃতা থামাতে হয়। টানা বাজেট পেশ করতে গিয়ে শনিবার হঠাৎ অস্বস্তি অনুভব করেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট বক্তৃতার মাঝপথেই ঘামতে ঘামতে বেঞ্চে বসে পড়েন তিনি। অন্য মন্ত্রীদের দেখা যায় এগিয়ে এসে তাকে ক্যান্ডি খাওয়াতে। এনডিএ শরিক শিরোমণি অকালি দলের সংসদ সদস্য হরসিমরত কৌর বাদল অর্থমন্ত্রীকে পানি এগিয়ে দেন।
তাকে বসতে পরামর্শ দেন দলীয় এমপিরা। কিন্তু শেষ দুটি পাতা পড়া না হওয়ায় বসতে চাননি নির্মলা। অবশেষে শীর্ষ বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং প্রায় জোর করে তাকে বসান।
কিছুক্ষণ পর সামান্য সুস্থবোধ করলে রাজ্যসভায় বাজেট পেশ করেন নির্মলা। খবর এনডিটিভির। শনিবার বেলা ১১টায় বাজেট পড়তে শুরু করে বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে তা শেষ করেন নির্মলা।
এদিন মোট ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট বক্তৃতা দেন নির্মলা, যা স্বাধীন ভারতে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থমন্ত্রীর রেকর্ড ভাষণ। এর আগে তার রেকর্ড ছিল ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট বাজেট বক্তৃতার। সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জসবন্ত সিনহার বাজেট ভাষণ ছিল ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। বাজেট শুরু হওয়ার আগে মধ্যবিত্তরা আশা করে তাকিয়ে ছিলেন অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার দিকে।
কিন্তু সীতারমণের বাজেটে হতাশ হয়েছেন তারা। সেই হতাশাও ফুটে উঠেছে বাজেট-পরবর্তী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মিমে। ধনঞ্জয় ভার্মা নামের একজন বলিউড নায়ক আমির খান কিছু একটা পড়ার চেষ্টা করছেন এমন ছবি দিয়েছেন।
লিখেছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাজেট পড়ার চেষ্টা করছে। ‘স্যার কিড’ নামের নেটিজেন সঞ্জয় দত্তের ছবি দিয়ে তার ওপরে লেখেন- ‘নেহি’ (এ বাজেট মানি না)।
দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজেট পড়তে পড়তেই নির্মলার পা টলে যাওয়া আর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠা কি ফের অর্থনীতি নিয়ে সরকারের ফাঁপা আওয়াজেরই প্রতিফলন, প্রশ্ন জাগছে অর্থনৈতিক মহল থেকে। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, প্রধান যে ইস্যুটা নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল, সেটা বেকারত্ব। আমি এমন কোনো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে দেখলাম না যেটায় যুবকরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে।
আড়াই ঘণ্টা ধরে শুধু ফাঁকা আওয়াজ শুনলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, বক্তব্য এত দীর্ঘ ছিল যে কিছুই বুঝলাম না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমি স্তম্ভিত, নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা শেষ।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের (এলআইসি) অংশীদারিত্ব বিক্রি হওয়া নিয়ে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, কীভাবে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দেশের গর্বের ও ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৌশলে আক্রমণ করছে, এটা কি একটা যুগের অবসান? সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব বলেছেন, এতে মানুষের রোজগার বাড়বে না। যুবকদের রোজগারও বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সঞ্চয়ের বদলে আয় কমে যাবে।
কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বলেন, ২০১৯-২০ সালের বাজেটে কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আয় বাড়ানোর জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট, এই মন্তব্য করে বাজেট ভাষণ শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশকে ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য পূরণে বদ্ধপরিকর সরকার। বাজেটে আয়করের হার কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।
৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো আয়কর লাগবে না। ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের হার ২০ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।সাড়ে ৭ লাখ থেকে ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, ১০ লাখ থেকে সাড়ে ১২ লাখ রুপির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ এবং সাড়ে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ রুপির ক্ষেত্রে আয়কর ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।