আমার প্রথম সংসদ অধিবেশনটা আমার জন্য ছিল এক ‘র‍্যাগিং’।

0

আমার প্রথম সংসদ অধিবেশনটা আমার জন্য ছিল এক ‘র‍্যাগিং’। সংক্ষেপে এই প্রেক্ষাপটটা বলা যাক মূল বিষয়ে যাবার আগে।

কয়েক মাস আগে সংসদে গেছি আমি প্রথমবারের মতো। সংসদ সদস্য হওয়া বলতে আমি বুঝি আইন প্রনয়ণ, রাষ্ট্রীয় নীতি পর্যালোচনা এবং সংশোধন। সেটার জন্য প্রস্তুতি, পড়াশোনা। তাই সংসদ নিয়ে নিজের কাছেই নিজের একটা প্রত্যাশা আমাকে নার্ভাস করে তুলছিল। সেই নার্ভাসনেস বেড়ে গিয়েছিল আরও কয়েকগুন কারণ আমার প্রথম অধিবেশনটা ছিলো বাজেট অধিবেশন। আমি অর্থনীতির ছাত্রী নই, তাই এমন একটা অধিবেশনের চরম মনস্তাত্ত্বিক চাপ আমার কাছে র‍্যাগিং এর মতোই মনে হয়েছিলো।

সেই অধিবেশনের জন্য আমি নিজেকে প্ৰস্তুত করে তুলেছি। বাজেট বক্তৃতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ে বুঝতে চেষ্টা করছি। সময় স্বল্পতার জন্য দিনরাত এক করে কাজ করেছি। বাজেটের নানা দিক নিয়ে সমালোচনা করে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি সংসদে। আমার বক্তব্যে আমি সুনির্দিষ্টভাবে বাজেটের নানা অসঙ্গতি এবং বাজেট বরাদ্দের নানা দিক নিয়ে সমালোচনা করেছি। আমাদের মতো অর্থনীতির একটা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি কেমন হওয়া উচিত, বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের প্রাধিকার কোন কোন ক্ষেত্রে কেমন হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আমি আমার মতামত জানিয়েছি একেবারেই অর্থনৈতিক দর্শনের দিক থেকে। সাংসদদের স্পীচ পাবলিক ডকুমেন্ট, যে কেউ মিলিয়ে নিতে পারেন।

এখন যে অধিবেশনটা রাষ্ট্রপতির ভাষনের ওপর চলছে, সেটায় বিগত বছর নানা সেক্টরে সরকারের সাফল্য দাবি করে সরকারের লিখিত বক্তব্য রাষ্ট্রপতি পাঠ করেছেন। এই ভাষণের জবাবে আমি অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, আইনের শাসন, মানবাধিকার নানা ক্ষেত্রে ভাষণের অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সরকারের নানা দিকের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছি। এই ব্যর্থতা প্রমাণ করতে আমি ব্যবহার করেছি প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি-পরিসংখ্যান-অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা।

আমার এই দু’টো বক্তব্য নিয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। পুরো বক্তব্যগুলো ইউটিউবে আছে। যে কেউ দেখতে পারেন, এই বক্তব্যগুলোতে আমি মূল বিষয়ের বাইরে একটা শব্দও উল্লেখ করিনি। কিন্তু আমার এই বক্তব্যগুলো নিয়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা যা করেছেন সেটা ভীষণ আমোদপ্রদ, হাস্যকর কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়।

সংসদে এইরকম বিতর্কে এমনকি কোন সত্য ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আক্রমণ করাও সংসদীয় রীতিনীতিতে পড়ে না। কিন্তু ওই সব সংসদ সদস্য তাদের বক্তৃতায় আমাকে আক্রমণ করার জন্য আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার, নোংরা ভাষা ব্যবহার করছেন। এই আক্রমন থেকে বাদ যাননি আমার মৃত পিতাও। সংসদে আমার বলা বেশ কিছু কথা স্পিকার এক্সপাঞ্জ করেছেন যেগুলো আদৌ অসংসদীয় বক্তব্য ছিল না। কিন্তু এইসব সদস্যের মিথ্যা, কুরুচিপূর্ণ অসংসদীয় বক্তব্যের একটিও এক্সপাঞ্জ করা হয়নি।

স্বাধীন দেশ হিসাবে আমাদের যাত্রার সময় তো কম হয়নি; আমরা অর্ধ শতাব্দী পূর্ণ করতে যাচ্ছি। এমন সময়ে সরকার দলীয় সদস্যদের বক্তব্য শুনতে শুনতে ভাবি নামতে নামতে আমাদের রাজনীতিবিদদের মান কতটা তলানীতে এসে ঠেকেছে! এটা এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে কষ্ট দেয়।

আমি আবার ভীষণ আনন্দিত বোধ করি, যখন দেখি আমার বক্তব্যের কোন যৌক্তিক জবাব সরকারদলীয়দের কাছে থেকে আসছে না। এর মানে তারা দেশের তথাকথিত উন্নয়নের যে বযা়ন তৈরি করছে তার বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেযা় যুক্তি তাদের সেই বযা়নের অসারতাকেই প্রমান করে। তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি দিয়ে দেযা় বক্তব্য যখন মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে ফিরে আসে আমার কাছে, তখন সেটা আমাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় আমি বিতর্কে জিতে গেছি। কারন যুক্তি তর্ক তথ্য উপাত্তে হেরে যাওয়া মানুষের কুরুচিপূর্ণ ভাষায় মিথ্যাচার আর ব্যক্তিগত আক্রমন ছাড়া কিই বা করার থাকে?

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com