ঋণখেলাপিরা পাবে আরও বড় ছাড়

0

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বড় ঋণখেলাপিদের আবারও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।

বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণ নবায়ন করার চলমান নীতিমালার আওতায় বড় খেলাপিদের পুনঃতফশিলের সুযোগ দেওয়া হবে। এর বাইরে কিছু খেলাপি ঋণ করা হবে অবলোপন। আদায় বাড়িয়েও খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য নেওয়া হচ্ছে বেশকিছু কৌশল।

সূত্র জানায়, আইএমএফ-এর শর্ত হচ্ছে-কমাতে হবে খেলাপি ঋণ। এর নীতিমালা উন্নীত করতে হবে আন্তর্জাতিক মানে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আগামী জুন থেকেই এগুলো দৃশ্যমান করতে হবে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।

এর আগে জুনের মধ্যেই ঋণ পুনঃতফশিল করা এবং খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংকের খারাপ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রতি দিয়েছে সরকার।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতির কারণে কয়েকটি গ্রুপ বড় অঙ্কের ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ব্যাংকে দুটি গ্রুপের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। এ দুটি গ্রুপকে কম খেলাপি ঋণ আছে-এমন একটি ব্যাংকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন ব্যাংক ঋণ দুটি পাবে খেলাপিমুক্ত হিসাবে। তবে কীভাবে দুটি নবায়ন করা হবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এর আগে সরকারি একটি ব্যাংকের একজন ঋণখেলাপি গ্রাহককে অন্য একটি সরকারি ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। কোনো প্রক্রিয়ায়ই ঋণটি নবায়ন করা হয়নি। তবে নতুন ব্যাংক ঋণটিকে নিয়মিত হিসাবে পেয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় এখন খেলাপি ঋণ স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে নিয়মিত হওয়ার পর গ্রাহক আরও নতুন করে ঋণ পাবে।

এভাবে সরকারি খাতের পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানো হবে। এছাড়াও মাঝারি ও ছোট ঋণগুলো বিশেষ সুবিধায় নবায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে। বেসরকারি একটি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। ওই ব্যাংকেও ঋণ নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে খেলাপি ঋণ নবায়নে দেওয়া বিশেষ ছাড় এখনো অব্যাহত রয়েছে। ওই সুবিধাকেই এখন কাজে লাগানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়. খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয় এবং ওই খেলাপির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে হয়। ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে কৃষি, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ মামলা ছাড়াই অবলোপন করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে এখন ঋণ অবলোপন করেও খেলাপি ঋণ কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এছাড়া কিছু খাতে নগদ আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে গ্রাহকদের নতুন ঋণ দিয়েও খেলাপি ঋণ শোধের সুযোগ পাবে অনেকে, যা ব্যাংকিং নীতিমালার পরিপন্থি।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে ঋণ আদায়ে যেভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে তাতে এখন খেলাপি ঋণ আদায় করা কঠিন হবে। আদায় করে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়। ফলে নীতি সহায়তায় ছাড় দিয়ে কমানো হবে। এতে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা আরও দুর্বল হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশের বেশি। এক বছর আগে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ হচ্ছে ১ লাখ ১৮৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ এসব ঋণ দুই বছরেরও বেশি সময় খেলাপি হয়ে আছে। এগুলো থেকে ব্যাংক ঋণ আদায় করতে পারছে না।

প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, দেশের মোট ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৫ শতাংশের নিচে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩৩টি ব্যাংকের। এসব ব্যাংক নিয়ে তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু ২৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশের ওপরে। এগুলোর মধ্যে ৭টি সরকারি ব্যাংক। এগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কমাতে হবে। কারণ কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশও রয়েছে।

বেসরকারি খাতের ২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশের ওপরে। এগুলোর খেলাপি ঋণও ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। ২০টি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আছে ৫ শতাংশের ওপরে; কিন্তু ২০ শতাংশের নিচে। এগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে ৫ শতাংশে নামাতে হবে।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ গত এক বছরে বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এগুলোয় খেলাপি ছিল ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেম্বরে বেড়ে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা হয়েছে।

আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্যে সম্পদের শ্রেণিবিভাগ সঠিকভাবে প্রণয়ন, বিশেষ করে ঋণ পুনর্গঠনের তথ্য তুলে ধরা হলে ব্যাংকের ঝুঁকির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। ফলে ব্যাংকের দুর্বলতা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।সূত্র: যুগান্তর

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com