‘মোদি-ঘনিষ্ঠ’ আদানির বিরুদ্ধে উচ্চ তদন্তের দাবি উঠল সংসদে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার ‘প্রতারণা’ নিয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসা এবং শেয়ারবাজারের পতনের ঘটনার তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদে সরব হন কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম ও শিবসেনা সাংসদেরা। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পাশাপাশি এবার যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ার দাবি তোলে তারা।
বৃহস্পতিবার লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশনে বিরোধীদের যুক্তি ছিল, এটি শুধু একটি শিল্পগোষ্ঠীর সম্পদের মূল্য কমে যাওয়ার প্রশ্ন নয়। এর জেরে দেশবাসীর সঞ্চয় বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, ওই সংস্থার মাধ্যমে এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কের তহবিলে বিনিয়োগ হয়েছে, ঋণ হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনভর উপার্জনের সঞ্চয় রয়েছে।
বুধবার আদানি এন্টারপ্রাইজেসের ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ছাড়ার (এফপিও) প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত তদন্ত ও পদক্ষেপের প্রয়োজন।
কিন্তু সরকারি তত্ত্বাবধানে সেই তদন্ত-প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হবে না বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী সাংসদেরা। তাদের অভিযোগ, শুধু মোদি নন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ শাসক শিবিরের একাধিক প্রথম সারির নেতার সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ রয়েছে আদানির। ফলে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরুর আগে সংসদে রণকৌশল স্থির করতে বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদদের বৈঠকে ডেকেছিল কংগ্রেস। বাম, শিবসেনা, ডিএমকের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৈঠকে হাজির ছিলেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনও। বৈঠকের পরে কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যসভা সাংসদ মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও জেপিসি গড়ার দাবি জানিয়েছি। জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই দাবি।
বিরোধীরা দাবি জানালেও মোদি সরকার জেপিসির দাবি মানবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিরোধী শিবিরে। পরিসংখ্যান বলছে, বিরোধীদের দাবি মেনে রাজীব গান্ধীর সময়কার বফর্স-কাণ্ড, নরসিংহ রাও সরকারের আমলে হর্ষদ মেহতা শেয়ার কেলেঙ্কারি কিংবা মনমোহন সিংহের সরকারের আমলে টু-জি স্পেকট্রাম বিক্রির ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে জেপিসি গড়া হলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত সেই পথে হাঁটেননি মোদি। ললিত মোদির আইপিএল-কাণ্ড, নীরব মোদির ঋণ দুর্নীতি, রাফাল চুক্তির ‘অস্বচ্ছতা’ নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।