ফিলিস্তিনি দেখলেই গুলি করার ‘সবুজ সংকেত’ দিলেন নেতানিয়াহু
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের উপকণ্ঠে সিনাগগের বাইরে হামলার ঘটনার পর ইসরাইল জুড়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে দেশটির সরকার। সামরিক বাহিনীকে আরও জোরদার করা হয়েছে অধিকৃত পশ্চিম তীরে।
এর মধ্যেই শনিবার (২৮ জানুয়ারি) জেরুজালেমের পুরাতন শহরে এক ফিলিস্তিনি কিশোরের ছোড়া গুলিতে দুজন গুরুতর আহত হন। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে খুব দ্রুতই পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ধরনের হামলা করে পার পাওয়া যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এখন চাইছেন ইসরায়েলিদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে।
শনিবার রাতেই মন্ত্রিসভা ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেন নেতানিয়াহু। পরে এ সংক্রান্ত ঘোষণাও দেন। কিন্তু তার পদক্ষেপকে ‘সম্মিলিত শাস্তি’ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা দাবি করছেন, এমন সিদ্ধান্ত সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এটি ‘ফিলিস্তিনি দেখলেই গুলি করার নির্দেশ’ হিসেবে দেখবে উগ্রপন্ত্রী ইহুদিদের জন্য।
খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু ইসরায়েলি নাগরিকদের ‘সুরক্ষায়’ তাদের হাতে বন্দুক তুলে দিতে চাইছেন। এ পদক্ষেপটি ত্বরান্বিত করতে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহের প্রচেষ্টাও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েলে দুটি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের বাড়িঘরও ধ্বংস করা হবে। তবে, তার আগে সেগুলো সিল করা হবে।
‘যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায়ে’ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি এ ইহুদি নেতার। এটি কার্যত ফিলিস্তিনি দেখলেই গুলি করার ‘সবুজ সংকেত’।
নেতানিয়াহু এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মূলত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাপক চাপে পড়ে। তাদের অনেকটা বাধ্য করেন কট্টরপন্থী ইসরায়েলে নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চাপ দেন। সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড দিতেও নেতানিয়াহুকে চাপ প্রয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন বেন-গভির।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের উপকণ্ঠে সিনাগগে ও পুরাতন শহরে হামলাকারীদের পরিবারের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাও বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিগুলোকে শক্তিশালী করতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানোর পরপরই ঘটনাগুলো ঘটছে। এর মধ্যে আগামী সোম ও মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জেরুজালেম ও রামাল্লা সফর করবেন।
গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের উপকণ্ঠে সিনাগগের বাইরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত হন। পরদিন জেরুজালেমের পুরাতন শহরে দুজন গুরুতর আহত হন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো এক সামরিক অভিযানে বয়স্ক নারীসহ ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে নিজেদের ‘একক রাষ্ট্র’ দাবি করা ইসরায়েল বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। কেননা, প্রথম ঘটনার পরপরই অধিকৃত পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরাতন শহরের ঘটনায় যুদ্ধ প্রায় আসন্ন।