মিশরে আল-সিসি প্রশাসনের অধীনে অন্ধকারতম সময় পার করছেন নারীরা
সারা মোহানি যখন প্রথমবার আটক হয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা তাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে তার শরীর নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করছিলো। তারা মোহানিকে বলছিলো, যদি আন্দোলনের কোনো ছবি তার মোবাইলে পাওয়া যায় তাহলে তাকে এখানেই ধর্ষণ করা হবে। সেটা ছিলো ২০১৭ সাল। তখন সারা মোহানিকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে আটক করে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তিনি এজন্য প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু তারপরেও ওইসব মন্তব্য তাকে হতভম্ব করে দিয়েছিলো। তিনি জানান, আমরা নারীরা আন্দোলনে যোগ দেয়ার পূর্বে আলোচনা করে নেই- যখন যৌন আক্রমণের শিকার হবো তখন আমরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবো। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি খাওয়ার থেকেও এটি নিয়ে বেশি আলোচনা করি আমরা।
ঘটনা মিশরের। সেখানে সরকার বালতাগিয়া ভাড়া করে শান্তিপূর্ন আন্দোলনে হামলা ও নারীদের ওপর যৌন আক্রমণ করার জন্য।
বালতাগিয়াকে বলা হয় সরকারি গু-াবাহিনী যার সদস্যরা টাকার বিনিময়ে সরকারবিরোধীদের নানাভাবে শায়েস্তা করে থাকে। যদিও রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। মিশরের কর্তৃপক্ষ নারীদের ওপর পুলিশ স্টেশন থেকে শুরু করে কারাগারের মধ্যে, তল্লাসী চৌকিতে এমনকি পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করতে গেলেও যৌন নির্যাতন চালায়।
আরব বসন্তের ৯ বছর পর এটিই মিশরের প্রকৃত অবস্থা। এটিই মিশরে নারীদের বাস্তবতা। রাজনীতিতে সক্রিয় নারীদের জন্য মৌখিক ও শারিরীক যৌন নির্যাতন এখন একটি প্রতিদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অথচ এই নারীরাই ২০১১ সালে তাহরির স্কয়ারে সকলের সঙ্গে দাড়িয়েছিলো, প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। মিশরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান হোসনি মোবারকের আমলেও নারীরা নিয়মিত নিপীড়নের শিকার হতেন। তাদের অধিকার খর্ব করা হতো। বিশেষ করে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের বিষয়টা আসতো। কিন্তু এখনো পরিবর্তনের পেছনে তাদের বড় অবদান থাকার পরেও তাদেরকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে।
সারা মোহানি বলেন, বিপ্লবের পর নারীরা তাদের আওয়াজ তোলার শক্তি বুঝতে পারলো। সমাজে এর প্রভাব ও গুরুত্ব উপলব্ধি করলো। এরপর যখনি তারা নিজের অধিকারের প্রশ্ন তুললো তখনি নেমে এলো নিপীড়ন। মিশরে নারীরা শুধু পরিবারের পুরুষদের হাতেই নির্যাতিত হননা, শুধু রাস্তায় পুরুষের হামলার শিকার হননা, তাদের নিষ্পেষণে প্রশাসনের পুরুষরা উঠে পড়ে লেগেছে বলেও জানান তিনি। নারীদের যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচানোর বদলে তারাই নারীদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করে নারীদের রাজনীতিতে অংশ নিতে বাঁধা দিতে।
মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি যখন জেনারেল থেকে প্রেসিডেন্ট হলেন ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি ২০১১ সালের মতো আরেকটি বিপ্লবের সম্ভাবনা মুছে দিতে চাইলেন। এ জন্য তিনি দেশটিতে অন্তত ৬০ হাজার মানুষকে কারাবন্দী করেন। তাদেরকে সেখানে নির্যাতন করা হয় এবং মৃত্যুর জন্য কারাগারের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। কোনো ধরণের চিকিৎসা ছাড়াই অনেকে মারা যান। নির্যাতন থেকে বাদ যাননি প্রতিবাদী নারীরাও। তুরস্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা উইরেকর্ডের হিসেবে ২০১৩ সালে সিসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির আটককেন্দ্রগুলিতে নারীদের ওপর নির্যাতনের ২৭৬১টি ঘটনা ঘটেছে।
আরেকটি নারী অধিকার গ্রুপের মুখপাত্র আসমা জানান, আল-সিসির অধীনে মিশরের নারীরা ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায় পার করছে। বিপ্লবে নারীদের যোগ দেয়ার শাস্তি হিসেবে আল-সিসি নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মোহানির মতেও, এটি বিপ্লবে যোগ দেয়ায় নারীর জন্য শাস্তি হিসেবে ব্যবহার করছে মিশরের কর্তৃপক্ষ।