‘ইয়ে লো আজাদি’, দিল্লি পুলিশের সামনেই বিক্ষোভে গুলি রামভক্তের
‘কিসকো চাহিয়ে আজাদি? ম্যায় দুঙ্গা আজাদি। ইয়ে লো আজাদি।’ স্লোগান দিতে দিতে হঠাৎই মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়লেন যুবক। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। একটু অন্যরকমের ভারতের রাজধানী দিল্লি জামিয়া মিল্লিয়া চত্বরে স্লোগানে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা খানিক থমকালেন, কিন্তু বিশেষ অবাক হলেন না। মিছিলকারীরা চমকে উঠলেন হঠাৎই, যখন দেখতে পেলেন অন্যরকমের স্লোগান দেয়া সেই যুবকের হাতে উঠে এসেছে একটি পিস্তল। তা তাক করা বিক্ষোভকারীদের দিকেই। মুহূর্তেই থমকে গেল মিছিলটা।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দিলো ওই যুবক। পুলিশের সূত্রে জানা যাচ্ছে, ধৃত যুবকের নাম গোপাল শর্মা। পুলিশের কাছে ওই অভিযুক্ত নিজেকে ‘রামভক্ত’ পরিচয় দিয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), এনআরসি, এনপিআর বিরোধী ইস্যুতে বিক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। গুলি চালনার পর ওই যুবক পালাতে গেলেও পুলিশ কর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ভারতজুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন অবিজেপি দলের ছাত্র সংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই যুবককে থামানোর জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও, তারা কিছুই করেনি। বস্তুত, বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুক হাতে ওই যুবক মিছিলের কাছে পৌঁছে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ‘ঘটনার পরেই আমি দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা এই ঘটনায় যুক্ত, তারা কেউই পার পাবে না।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার আগে ওই যুবক ফেসবুক লাইভ করলেও তাকে আগেভাগে ধরা গেল না কেন। এই ঘটনায় জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনের ছাত্র সাদাব ফারুক আহত হয়েছেন। জামিয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। তবে দিল্লির ভোট পিছচ্ছে না।
গত ডিসেম্বর মাসে সংসদে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে তা আইনে পরিণত হওয়ার পর থেকে দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট সিএএ এবং এনআরসি-এনপিআর বিরোধিতায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে এর আগে জামিয়ার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি চালনার অভিযোগ ওঠে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই ক্লাস বয়কট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ চলেছে। সেই বিক্ষোভের উপরই এদিন গুলি চলেছে। জামিয়ার আহত ছাত্র বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিনের ঘটনার পরেই প্রতিবাদে জামিয়ার হাজার হাজার ছাত্র অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন। অন্য জায়গা থেকেও দলে দলে বিক্ষোভকারীরা এসে ভিড় জমাতে থাকেন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বিক্ষোভস্থলের সামনে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। কার্যত দুর্গে পরিণত হয় গোটা চত্বর। বিক্ষোভকারীরা দাবি করতে থাকেন, অবিলম্বে ধৃত যুবককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই ঘটনার পিছনে যারা আছে, তাদেরও দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।
সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধিতায় বৃহস্পতিবার রাজঘাটে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল প্রায় ২০০টি সংগঠন। যার মধ্যে ছিল জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটিও। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশাল প্রসাদ, পারভিন সুলতানারা জানিয়েছেন, রাজঘাটের ওই কর্মসূচিতে যোগ দিতেই জামিয়া এলাকার হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল করছিলেন ছাত্ররা। সেইসময়ই ঘটনাটি ঘটে। পূর্ব ঘোষিত মিছিলের জন্য জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংলগ্ন এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তাদের সামনেই কীভাবে এতবড় ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরই অভিযুক্ত গোপালের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কেউ ব্লক করে দেয়। তবে ফেসবুকে যে নামে অভিযুক্তের অ্যাকাউন্ট আছে, সেটিই তার প্রকৃত নাম কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ফলে ঘটনাটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
আগামী সপ্তাহেই দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। এই ভোটের মূল এজেন্ডাই হতে চলেছে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর ইস্যু। কাজেই নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনায় গেরুয়া শিবির কিছুটা চাপে পড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম নয়। সম্প্রতি শাহিনবাগের বিক্ষোভরত স্থানীয় মহিলাদেরও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বন্দুকধারীর বিরুদ্ধে। যদিও জামিয়ার মতোই শাহিনবাগের ওই ব্যক্তিকেও সঙ্গে সঙ্গেই আটক করেছিল পুলিশ। তবে জামিয়ার মতো শাহিনবাগে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। সেদিক থেকে আজকের ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভোটের মুখে যা দিল্লির আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলো।