আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে বেপরোয়া তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ
নির্বাচন হয়ে গেছে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। কিন্তু তার রেশ রয়ে গেছে একবছর পরেও। সেই জেরে পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি হয়েছে নজীরবিহীন হামলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, লুটপাট হয়েছে মাছের খামার, গরু ছাগল, আসববাপত্র। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রংপুরের বদরগঞ্জের বিঞ্চুপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ ওই ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মাজেদের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আরেকটি মামলার এজাহার তদন্ত চলছে।
আর ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর এভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে মাজেদ বাহিনী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাজেদ মেম্বার জানিয়েছেন, কোনো ঘটনার সাথেই তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এদিকে শনিবার রাতে সরকারি গাছ কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার সময় মাজেদ মেম্বারের মালিকানাধীন জিবিএল-২ ভাটার তিন ফায়ারম্যানকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
সরেজমিন পরিদর্শনের সময় ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা। কিছু বুঝে উঠার আগেই ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দুর্বৃত্তদল দা, খন্তি, বেকি, বল্লম, কুড়াল, হকিস্টিক, তীর, লাঠিশোঠাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বদরগঞ্জের বুজরুক বাগপাড় সরকার পাড়া শান্তিরবাজার আশেপাশের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কৃষি খামারে বেপরোয়া তাণ্ডব চালায়। হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় ছাত্তার, মোক্তারুল, রওশন, আলতাফ, মনজুল, আফতাব, তাহসিন, নুর আলম, ইমরান, মুছা মিয়ার বসতবাড়ি। ভাংচুর করে ইমরান এবং সাদেকুল ইসলাম দোকান। দুর্বত্বরা খুলে নিয়ে যায় অনেক বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার। হামলা থেকে বাদ যায়নি নারী ও শিশুরাও।
সরেজমিনে দেখা গেছে সব থেকে বেশি ভাংচুর ও লটুপাট হয় উপজেলার জ্যেষ্ঠ ইটভাটা ও রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন এবং মোক্তারুল ইসলামের। সরেজমিনে দেখা গেছে জয়নালের বসতবাড়ি, বায়োফ্লোকের মাছের খামার, গরু ছাগল লুটের পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তির সব কিছুতেই চালানো হয় বেপরোয়া ভাংচুর। আগুন ধরিয়ে দেয়ারও চেষ্টাও করা হয়।
ভুক্তভোগী জেষ্ঠ্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন তার বাড়ির হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, `ব্যবসার সুবাদে বদরগঞ্জ রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনেই থাকি আমরা। কিন্তু বাগপাড়ের বাড়িতেই আমার খামার বাড়ি। ঘটনার সময় মাজেদ মেম্বার আমার খুলিতে দাড়িয়ে বলেছে, আগে বাড়ি লুট করো, ভাংচুর করো, তারপর জ্বালিয়ে দাও। লুটপাট ভাংচুর করেছে। আগুন জ্বালানোর জন্য তারা মবিল ও পেট্রোল দিয়েছিল আমার দেয়ালে ও গেটে। ওই সময় পুলিশ চলে আসায় সেটা করতে পারেনি তারা। তা নাহলে সব জ্বালিয়ে দিত তারা। অনেক কষ্ট করে আমি খামার করেছি। সব শেষ করে দিল তারা। আমার ওপর মাজেদ মেম্বার এই অন্যায় অত্যাচার দীর্ঘদিন থেকে করছে। আমি তাকে ভোট দেই না। আমি তাকে সাপোর্ট করি না এটা আমার অপরাধ। যারা তাকে ভোট দেয় নাই। সাপোর্ট করে নাই। তাদের ওপর তার এই অত্যাচার চলে আসছে। বিভিন্নভাবে তাদের ওপর জুলুম করে। দোকাট পাট বাড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছে।`
জয়নাল আবেদীন বলেন, `আমি তাদের কোনো ক্ষতি করি নাই, অন্যায় করি নাই। আমরা বাড়িতেও থাকি না। কেয়ারটেকার ছাড়াও ছেলে শাহ আলম সেখানে দেখাশুনা করেন। এর আগেও তারা অনেক ক্ষতি করেছে আমার। আমি তাদের বিরুদ্ধে ছয় বার অভিযোগ করেছি। থানায় আমার মামলা এন্ট্রি হয়নি। এবারও মামলা দিয়েছি। মামলা এন্ট্রি করবে কিনা তা জানি না। এখন আমরাই নিজেরাই জীবনের নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি।`
ব্যবসায়ি জয়নাল বলেন, `রাতভর আমার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে তারা। আড়াই মন ওজনের করে ৮০ বস্তা জিরো শাইল ধান, আইশার ৩৮০ মডেলের ট্রাক্টর, ১ হর্সের করে দুটি পানির মোটর, পাঁচ বস্তা আলু, দুটি শ্যালো মেশিন, মাছ ও গরুর ফিড ৩০ বস্তা, জার্সি জাতের দুটি গাভি, দুটি খাসি এবং ১০টি বায়োফ্লোক ট্যাংকিতে থাো মাছ ও মাছের পোনা লুট করে নিয়ে গেছে। ভাংচুর করা হয়েছে খামারের পাইপসহ বৈদ্যুতিক লাইন, জেনারেটর, জমিচাষ করা মেশিন, ধানভাঙা মেশিন। মাছগুলো সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছে। আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটার ক্ষতিপুরণ চাই, সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।`
জয়নালের ছেলে শাহ আলম জানান, `ঘটনার সময় পুলিশকে বারবার আমরা ডেকেছি। কিন্তু পুলিশ গিয়ে শান্তির বাজার এলাকায় অবস্থান করেছে। তারা রাস্তা থেকে আগে নামেনি। এদিকে মাজেদ মেম্বারের লোকজন আমার বাড়ি খামারসহ অন্যান্য বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট করে চলে গেছে। পুলিশ কোনো বাঁধা দেয়নি। মাজেদ মেম্বারকে যারা ভোট দেয়নি, শুধু তাদের বাড়িঘরেই এই হামলা হয়েছে।`
শাহ আলমের অভিযোগ, `মাজেদ মেম্বারের সাথে বিট অফিসার আমিনুলের সখ্যতার কারণে পুলিশের উপস্থিতিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। আবার শুনছি তারাই হামলা করে, তারাই নাকি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ কিসের স্বার্থে এটা করছে আমরা জানি না। আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।`
জয়নালের অন্য আরেক ছেলে রংপুর জজ কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবী শহিদুল ইসলাম জানান, `মাজেদ মেম্বার ও তার বাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে আমাদেরসহ কালাম সমর্থিতদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করছে। আমরা এর আগে যত মামলা দিয়েছিলাম। পুলিশ সব মামলার এজহার নিয়ে বলে মীমাংসা করে নেন নিজেদের ভেতর। আমার ক্ষতি হলেও কী আমাকে শুধু মীমাংসা করতে হবে?`
শহিদুলের অভিযোগ `যে দাঙ্গাটা শুক্রবার হয়েছে, সেটা নারকীয়। ওসি সাহেব নিজেই দাবি করেছে, তিনি রাত ২ টা পর্যন্ত সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ছিলেন। কিন্তু তাদের উপস্থিতিতেই আমিসহ আমাদের অনেকের বাড়ি ভাংচুর লুটপাট করা হলো। সেটা কিভাবে সম্ভব। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করছি।`
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মোক্তারুল ইসলাম জানান, `আমি তখন বাজারে ছিলাম। এসে দেখি আমার বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ জন। মাজেদ মেম্বার আর আতাউর বাড়ি ভাঙার আদেশ দিতেছে। ওরা ভাঙতেছে। তারা কুড়াল, খন্তি, দা দিয়ে আমার বাড়ি সব কিছু ভাঙচুর করে। নির্বাচনের সময় আমি মাজেদ মেম্বারকে ভোট না দেয়ার কারণেই তারা আমার এই ক্ষতিটা করল। এখন আমার আর কিছুই থাকল না। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। ক্ষতিপূরণ ও বিচার চাই।`
ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ লুবনা বেগম জানান, `প্রথমে ইটপাটকেল, পরে ওরা কোদাল, দা, খন্তি নিয়ে হুহু শব্দে বাড়িঘর ভাংচুর শুরু করে। যখন আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়, তখন বাচ্চাদের নিয়ে আমরা মোক্তারুলের বাড়িত ঢুকছি। যখন বেড়া ভাংচুর শুরু করেছে তখন ঘরে গেছি। টিনের বেড়া তছনছ হয়ে যখন ঢিল এবং খন্তি ঘরে ঢুকতেছে তখন জানের ভয়ে বাচ্চা নিয়া খাটের নিচে লুকাইছি। বাচ্চাদের গায়ে ঢিল লাগছে। আমার বাড়িঘড় ভাংচুর করছে। কারেন্টের মিটার ভাঙ্গি নিয়া গেইচে। জানালা ওরা খুলি নিয়া গেইচে। যদি আমার সন্তানের ক্ষতি হইত তাহলে কী ওরা আমার সন্তানের ক্ষতিপূরণ দিত।`
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি সাদেকুল ইসলাম জানান, `আমি দোকান চালাওছি। আমি জানি না যে হামার দোকানোত হামলা কইরবে। ওরা হুহু করি আসি হামার দোকানোত ঢেলঢুল শুরু কইরচে। ঝাপ নামবারো সময় দেয় নাই। কাচকুচ সব ভাঙ্গি গেইচে। ক্যাশোত টাকা আচিল সেটাও নিয়া গেইচে। সব বরবাদ কইরচে হামার। কোনোরকম ঝাপ ঠাসিঠুসি ধরি দোকানের ভেতর থাকি জীবন রক্ষা কইরচি।`
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
ভুক্তভোগী এবং এলাকাবাসী জানিয়েছেন, হামলার নেপথ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হারজিতের জেরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিষ্ণপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে হারিয়ে নির্বাচিত হন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা আব্দুল মাজেদ। এরই মধ্যে কালাম সমর্থিত মুছা মিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে একটি ১০৭ ধারা মামলার করেন। ঘটনার দিন শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সেই মামলার নোটিশ মাজেদ সমর্থিত আজিবার, মজিবর, লিটন, সাব্বির, খরকুসহ অন্যদের কাছে পৌঁছলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যাতায়াতের রাস্তা নিজেদের দাবি করে মাজেদ মেম্বার সমর্থিত নারীরা কালাম সমর্থিত মুছা মিয়ার পরিবারের নারীদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় আরমান নামের এক কিশোর মুছা মিয়ার বাড়িতে ঢুকলে তাকে সেখানে আটকে দেয় তারা। বিষয়টি থানায় জানালে স্থানীয় চৌকিদার এসে কালামের সহযোগিতা নিয়ে ওই কিশোরকে বাড়ি থেকে বের করে আনে। এ সময় কথাকাকাটির একপর্যায়ে কালামের ওপর লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাজেদ সমর্থক ফকির নামের এক যুবক। এরপর তারা কালাম সমর্থক বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালানো শুরু করে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর রাত ১০ টার দিকে আবারো মাজেদ মেম্বার ও তার সমর্থকরা সংঘবদ্ধ হয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাসাবাড়ি, খামার ও দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে।
ঘটনার শিকার মশিউর রহমানের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র আরমান দাবি করেন, `মামলার নোটিশ নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে মুছা মিয়ার লোকজন আমার মাকে বাড়ির ভেতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় আমি আমার মাকে ওদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছিলাম। তখন ওরা কয়েকজন মিলে আমাকে মাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে টেনে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে দুই থেকে তিনটি চর মারে। এরপর তারা আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। সেখান থেকে বের করে আবার আরেকটা ঘরে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে আমি বসে থাকি। আমার মোবাইলে কে যেনো একটা এসএমএস দেয়। তখন তারা আমার মোবাইল নেয়ার চেষ্টা করে। আমি না দিলে মুছা মিয়ার ছেলে সোহাগ আমাকে ধাক্কাধাক্কি ও মারধোর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেন। পরে চৌকিদার এবং কালাম এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ সময় কালামকে খুর দিয়ে মারলে তাকে মেডিক্যাল নিয়ে যাওয়া হয়।`
ঘটনা প্রসঙ্গে বাড়িঘর ভাংচুরের শিকার মোসলেমা বেগম জানান, `নির্বাচোনোত হামার মেম্বার আবু কালাম হারি গেইচে। আর মাজেদ মেম্বার হইচে। ভোটের পর থাকি ওই জিতছে দেকি সবগুলাক কয় ওমারগুলাক ডাঙ্গে শোতান। সেদিন মহিলারা শুদ্ধায় কাজিয়া লাইগচে। একটা ছাওয়াক বন্দ করি থুইচে। শুনিয়া হামার মেম্বার কালাম চৌকিদার সাতে ছাওয়াটাক বের করি দিচে। তকন ফকির নামের একটা চ্যাংরা কালাম মেম্বারের মাতাত ডাং দিচে। মাতা ফাটি গেইচে। ওমরা হামার মেম্বারের মারিল ফির তার পরে মাজেদের পাওয়ারোতে উয়ার পাচোত যেগুলা ঘুড়ি বেড়ায় সেইগলা হামলা করি ঘর বাড়ি ভাঙ্চুর কইরচে। লুটপাট করি নিয়া গেইচে। যকন হামার ব্যাটার ঘর ভাংচুর করে তখন আমি খুলিত পই ধরি ওরে বাপরে ওরে মাওরে করি চিকরি আর দোয়া করি। তখন মাজেদ কয় যাই গোরোত আইসপে তাক ফাটাও ধরি।`
আবুল কালাম ও মাজেদ মেম্বারের বক্তব্য
এ ব্যপারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচনে মেম্বার পদে হেরে যাওয়া আবুল কালাম জানান, `সব কিছুই মাজেদ মেম্বারের উপস্থিতিতে তার বাহিনী করছে। মাজেদ মেম্বার হলেই এই তাণ্ডব শুরু করে। এবারো সেটাই করছে। এবারো মেম্বার হওয়ার পর থেকে যারা আমাকে ভোট দিয়েছে কোনো সরকারি সুবিধা দিচ্ছে না। বরং নানাভাবে হয়রানি করছে। শুক্রবার মাজেদ ও তার গুণ্ডাবাহিনী যারা আমাকে ভোট দিয়েছে তাদের বাড়ি বাড়ি হামলা করেছে, ভাংচুর লুটপাট করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।`
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল মাজেদ মেম্বার জানিয়েছেন, আমি চারবারের মেম্বার। আমাকে জনগণ ভালোবেসে ভোট দিয়েছে। এখন আমি সবার মেম্বার। যখন এসব ঘটনা ঘটেছে তখন আমি এলাকাতেই ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে তারা আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করছেন।
কী বলছে পুলিশ
ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, শুক্রবার ছোট বাচ্চাকে আটকে রাখা নিয়ে বিকেলে মাজেদ মেম্বারের লোকজন আবুল কালামের কিছু সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর ফিরে আসার পর রাতে আবারো মাজেদ সমর্থকরা হামলা চালায় বেশ কয়েকটা বাড়ি ও দোকানপাট ভাংচুর করে। আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ ঘটনায় জয়নাল আবেদীন নামের এক ব্যক্তির একটি মামলা নিয়েছি। মাজেদ মেম্বারের পক্ষ থেকেও মামলার এজাহার দেয়া হয়েছে। সেটাও তদন্ত করে দেখছি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা এবং বিট অফিসার আমিনুলের মাজেদ মেম্বারের পক্ষ হয়ে কাজ করা এবং নির্বাচনে হারজিতের জেনেরর বিষয়ে ওসি জানান, আমি নিজে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। অন্যকোনো বিষয়ে অভিযোগ থাকলে সেগুলো আমরা দেখবো।সূত্র: নয়া দিগন্ত