সরকারকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একদিন পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল, এখন আবার সেই পরিবেশ তৈরি করছে। তারা নির্বাচনটাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এ জন্য এক সময় তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে’।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে নির্বাচন নির্বাচন নামক একটা খেলা, একটা তামাশা, এটা করার দরকারটা কী? তারা যখন একতরফাভাবেই দেশ চালাবেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে ভিন্নভাবে চালাবেন, সেটা ঘোষণা করে দিলেই তো জনগণ কিছুটা হলেও রেহাই পেত’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভোটের আগের দিন আওয়ামী লীগ এ রকম একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে এটাই প্রমাণ করেছে যে, তারা এই নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এতে নির্বাচনের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করা হলে তারা বিএনপিকে বলেছে যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা হতে বাধা নেই, তবে ভোট চাইতে পারবে না’।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি কী মুনাফা আদায় করতে চাইছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছি, ধানের শীষকে সামনে নিয়ে আসছি। আমরা একটা পরিবেশ তৈরি করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছি। আমাদের জনগণ বেরিয়ে আসছে এটা আমাদের সবচেয়ে বড় মুনাফা। এটুকুই আমাদের অর্জন’।
‘গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, সকাল থেকেই কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিষয়টি আপনারা কীভাবে নিয়েছেন?’- জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি তারা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন করার জন্য। আমরা সেটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আমরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারকে বলছি। সর্বোপরি জনগণকে আহ্বান জানিয়েছি প্রতিহত করতে’।
‘নির্বাচনের দিন জনগণকে ঘর থেকে বের হয়ে আসতে বলছেন, আপনারা যারা ভোটার রয়েছেন, আপনারা কি ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যাবেন ভোট দিতে ? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবশ্যই যাবেন। তাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তারা সে দায়িত্বও পালন করবেন’।
অপর এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করছি এ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য। আমরা নিশ্চিত যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব’।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ইসি’র উদাসীনতা ও সরকারের নির্দেশে কাজ করার কারণে এই নির্বাচনও দলীয়করণ করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে স্পষ্ট। হাজারো বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মহল্লায়-মহল্লায় দলের সন্ত্রাসী দিয়ে মহড়া, হুমকি প্রদর্শন করে বিরোধী দলের কাউন্সিলর প্রার্থী ও কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। হুমকি দিয়ে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সর্বোপরি সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। পুলিশও একই ভূমিকা পালন করে চলেছে’।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।