আবারো ধরা খেলেন সেই বিতর্কিত বিচারপতি মানিক!
আসন্ন উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে প্রার্থিতা বাতিলের রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের ভুয় অভিযোগ এনে এ রিট দায়ের করে বিতর্কিত বিচারপতির শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি বিকালে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাবিথের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানান এই দুর্নীতিবাজ খ্যাত বিচারপতি। ওই সময় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
গত রোববার বিচারপতি মানিক হাইকোর্টে এই রিট করার পরই বিচারাঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। একজন সাবেক বিচারপতির কাজ কি একজন মেয়রপ্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিট করা?। তাবিথ আউয়াল যদি নির্বাচনী হলফ নামায় সম্পদের তথ্য গোপন করে থাকেন তাহলে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতিকুল ইসলাম কিংবা তার দলের লোকজন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু তিনি একজন সাবেক বিচারপতি হয়ে এটা করতে গেলেন কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে এখন আর তার সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। মানিকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের আইনজীবীরাও এখন আর তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই শেখ হাসিনাকে খুশী রাখার জন্য তিনি নিয়মিত টকশোতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বন্দনা করছেন আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।
জানা গেছে, বিচারপতি মানিক নিজেও জানতেন যে তার রিট খারিজ হয়ে যাবে। কারণ, তথ্য গোপনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশনই তার মনোনয়ন ফরম বাতিল করে দিতো। এসব জানার পরও শুধু সরকারের লোকজনকে খুশী রাখার জন্য মানিক তাবিথ আউয়ালের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিল। কিন্তু, দালালি করতে গিয়েও ধরা খেলেন।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো-তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের যে অভিযোগ তুলে তিনি রিট করেছেন, তার বিরুদ্ধেও তথ্য গোপনের সেই অভিযোগ আছে। তিনি একজন দৈত্ব নাগরিক। আপিল বিভাগের বিচারপতি হওয়ার সময় তিনি এই তথ্য গোপন করেছিলেন। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সময় মানিক কাগজ-পত্রে দ্বৈত নাগরিকের কোনো তথ্য দেননি। অর্থাৎ দ্বৈত নাগরিক সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। যা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এনিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম জুলফিকার আলী (জুনু) অভিযোগও করেছিলেন। এমনকি তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারপতি মানিকের ‘জাজশিপ’ প্রত্যাহার চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করা হয়েছিল। অথচ-দুর্নীতিবাজ সেই মানিকই আরেকজনের তথ্য গোপন নিয়ে টানাটানি করছেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতি হচ্ছে মানিক। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন দালাল হিসেবেও সর্বমহলে পরিচিত। এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও সরকারের অতি দালালি করার জন্য তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত ও লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। বিচারপতির চেয়ে মানুষ তাকে একজন দালাল হিসেবেই বেশি জানে।
দেখা গেছে, ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শামসুল হুদা এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর রাষ্ট্রপতি তাদের চাকরি স্থায়ী করতে পারেন আবার নাও পারেন। তাদের অস্থায়ী নিয়োগ দু’বছর হলে ২০০৩ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তাদের স্থায়ী নিয়োগ স্থায়ী করেনি। এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে এই বিচারপতিদের ভাগ্য খুলে যায়। আদালতের একটি রায়ের দোহাই দিয়ে ২০০৯ সালের ২২ মার্চ তারা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে পুনরায় স্থায়ী নিয়োগ পান। ফলে দেখা যায়, শেখ হাসিনার প্রতিও এই বিচারপতিদের কৃতজ্ঞতার শেষ ছিলোনা।
শেখ হাসিনার আমলে বিচারপতি হিসেবে পুনর্বহাল হওয়া এই দুই বিচারপতির একজন বিচারপতি শামসুল হুদার বেঞ্চে মাত্র তিনমাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫টি মামলা বাতিল করে দেয়া হয়। এই পাঁচটি মামলা হলো, ফ্রিগেট (যুদ্ধজাহাজ) ক্রয় দুর্নীতি মামলা, মেঘনা ঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা এবং ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্নীতি মামলা এবং বেপজায় পরামর্শক নিয়োগের মামলা। ঠিক একই সময়ে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির চারটি মামলা বাতিল করে দিয়েছিলেন। এই চারটি মামলা হলো, নভোথিয়েটার দুর্নীতি সংক্রান্ত তিনটি মামলা এবং মিগ যুদ্ধ বিমান ক্রয় দুর্নীতি মামলা।