মোহামেডানের ঐতিহ্য ধুলোয় মিশে গিয়েছে

0

মোহামেডানের সমর্থকেরা এখন পাথর হয়ে গেছেন। প্রিয় ক্লাবের কোনো খারাপ খবরেই তাঁদের মধ্যে আর প্রতিক্রিয়া হয় না। লিগ তালিকায় তলানিতে অবস্থান, ১৮ বছর ধরে লিগ শিরোপা না জেতা, রেলিগেশনের শঙ্কা—এসব তো আছেই, ফুটবলের বাইরেও ঐতিহ্যবাহী, দর্শকনন্দিত এই ক্লাব নেতিবাচক নানা কারণে বিতর্কিত। কিন্তু গতকাল ক্লাব টেন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান আর তাতে জুয়া খেলার নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হওয়ার ঘটনা ছাপিয়ে গেছে সবকিছুকেই। রাগে-দুঃখে–ক্ষোভে নীল হয়ে গেছেন সমর্থকেরা। এত দিন ধরে এই চলছে সাদা-কালো শিবিরে!

ক্লাব সমর্থকেরা তো আছেনই, মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলাররাও ক্ষুব্ধ পুরো ব্যাপারটিতে। বাদল রায় তো বলেই দিলেন, ‘মোহামেডানের সব ঐতিহ্য ধুলোয় মিশে গেছে।’

আগেই বলা হয়েছে, মোহামেডান মানেই সব নেতিবাচক খবর। দেশের শীর্ষ খেলোয়াড়েরা এখন আর মোহামেডানে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। কারণ, এই ক্লাবে নাকি মাসের পর মাস পারিশ্রমিক বকেয়া থাকে। ২০১৭ সালে মোহামেডানকে ফিফার কাঠগড়ায় দাঁড় করান ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিদেশি ফুটবলার এমেকা ইজিউগো। ২০১২ সালে মোহামেডানের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই নাইজেরীয়। কিন্তু পুরো পারিশ্রমিক তিনি পাননি। দিনের পর দিন তাগাদা দিয়েও সেই বকেয়া পারিশ্রমিক না মেলায় তিনি ফিফায় নালিশ করেন। অথচ, এই মোহামেডানই এখন ক্লাব প্রাঙ্গণে ক্যাসিনো বসিয়ে অবৈধ উপায়ে আয় করছে কোটি কোটি টাকা। আর মাঠের খেলায় তারা লবডঙ্কা!

বাদল রায়ের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে লিগ জিতেছিল মোহামেডান। ঘরের ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন সমর্থকদের কাছে। কোনো দিন ক্লাব ছাড়েননি। অবসরের পর দায়িত্ব পালন করেছেন ম্যানেজার হিসেবে। কিন্তু সেই বাদল রায়ই এখন আর মোহামেডান ক্লাব টেন্টে গিয়ে বসতে উৎসাহ বোধ করেন না। কারণ, বাদল রায় মনে করেন ওখানে গিয়ে বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই। ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘ক্যাসিনো অভিযান’ ক্ষুব্ধ করেছে বাদল রায়কে, ‘খুব কষ্ট পেয়েছি। মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো চলে, এটা মেনে নিতেই পারছি না। আমরা যখন খেলেছি, ক্লাবের সদস্যদের তাস খেলতে দেখতাম। পরে ক্লাবে চালু হয় হাউজি। কিন্তু ক্যাসিনোর কথা ভাবতেই পারি না। ক্লাবটির সব ঐতিহ্য ধুলোয় মিশে গিয়েছে।’

ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে ১৯৫৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মোহামেডান অন্তত ১৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। সেই দলটিই প্রায় ১৭ বছর ধরে লিগ শিরোপা জেতে না। ২০১৭-১৮ মৌসুমে তো ১২ দলের মধ্যে দশম হয়ে কোনো রকম অবনমন রক্ষা করেছে। ক্রিকেটে মোহামেডান শেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০০৯ সালে। অথচ খারাপ ফলের জন্য কারও কোনো জবাবদিহি নেই।

বাদল রায় নিজে এখনো মোহামেডানের সদস্য। কিন্তু ক্লাবের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে তাঁর অনেক ক্ষোভ, ‘একজন সদস্য হয়েও শুধু ভালো পরিবেশের অভাবে ক্লাবে যেতে পারি না। ক্লাবের কোনো মিটিং হয় না। কেন খারাপ হচ্ছে, এগুলোর কোনো জবাবদিহি নেই। প্রায় ৮-১০ বছর হলো কোনো এজিএম নেই। যাঁরা বর্তমানে ক্লাবের কর্তা হয়ে বসে আছেন, তাঁরা ক্লাবটিকে ভালোবাসেন না। লাখ লাখ সমর্থকের কান্না তাঁরা অনুভব করতে পারেন না।’

বর্তমান ক্লাব পরিচালনাকে স্বৈরাচারী শাসকের সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সহসভাপতি, ‘বর্তমান যিনি সভাপতি আছেন, তিনি ক্লাবের খোঁজখবর নেন বলে আমার জানা নেই। মূলত যাঁরা চালান, তাঁরা স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে চালাচ্ছেন। ক্লাবে কোনো দক্ষ সংগঠক নেই। যাঁরা থাকতে চান, তাঁরা খারাপ পরিবেশের জন্য যেতে ভয় পান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com