হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিজেপি’র চেষ্টা
অভিবাসী অন্বেষণের অংশ হিসাবে ভারতের ১৩০ কোটি নাগরিকের নিবন্ধ সংকলনের পরিকল্পনাটি সবার উপরেই প্রভাব ফেলবে। তালিকাটি সংকলন এবং সংশোধনের জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন, যা বছরের পর বছর ধরে হিন্দুত্ববাদী আবেগকে জ্বালিয়ে রাখতে পারবে। নিবন্ধন কিভাবে সম্পাদিত হবে এবং বাদ পড়াদের পরিণতি কী হবে তা অন্ধকারেই থেকে গেছে।
প্রকৃতপক্ষে, মোদি যদিও দাবি করছেন যে, সব কিছু ভুল বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে, প্রচারণা করে এই ধারণাটি শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ভারতের ৮০% হিন্দু জনগোষ্ঠী অভিবাসী মুসলমানদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন ও একমাত্র বিজেপিই পারে এই হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে। এর ফলে বিজেপি নির্বাচনগুলোতে সুবিধা লাভ করতে পারবে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে ভারতের অনুপ্রেরণামূলক ধারণাকে বাধা দেয়। মোদির নীতিগুলি তার মুসলিম দেশবাসীর বিরুদ্ধে নির্মমভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। কিভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দুদের আশ্রয় দিতে চায়, কিন্তু নির্দিষ্টভাবে মুসলমানদেরকে বাদ দেয়ার কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে পারে? নাগরিকত্বের আইনটি বিভেদকরণের প্রচেষ্টায় বিজিপি’র সাম্প্রতিক পদক্ষেপ, অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকায় মুসলমানদের উপর অত্যাচারের মাধ্যমে যার শুরু হয়েছিল। মুসলিম অধুষ্যিত এলাকাটিতে অধিবাসীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা, টানা কারফিউ জারি রাখা এবং পাঁচমাস ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের গণতন্ত্র বিভিন্ন ভাষা, জাতি, বর্ণ এবং ধর্মকে গ্রহণ করেছে। যে কোন ধরণের মেরুকরণের ফলে বহুজাতীয় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও নিরপেক্ষ সরকার, অন্য অনেক বিষয়ে ত্রুটিযুক্ত হলেও, এই বহুজাতিক বিষয়গুলো রক্ষা করে। তাদের মধ্যে যে কোন একটির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী নির্যাতন, সকলের জন্যই অন্তর্নিহিত হুমকির কারণ। যার ফলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।
ভোটারদের মনে রাখতে হবে যে, বিজেপি এর আগেও মেরুকরণের চেষ্টা করেছে যার ফলে অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হিন্দি ছাড়া অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করা যাবে না, বিজেপি’র এমন দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করেছিল তাদেরই অনুসারি নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা।
যেহেতু তার নীতিগুলোর কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে, তাই মোদী অহিংসার প্রচারক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিও নষ্ট করছেন। যেমন, হিন্দু মহিলাকে ভালবাসা বা গরু হত্যার করার কারণে অনেক মুসলমানকে দুর্ব্যবহার করা বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো কট্টর হিন্দুত্ববাদের বিদ্বেষমূলক আচরণ। সময়ে সময়ে মুসলিমবিরোধী মনোভাবের প্রবণতা গুজরাতের মতো গণহত্যার দিকে পরিচালিত করে, যেখানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। এখনও প্রতিনিয়ত হিন্দুদের উসকে দিয়ে এবং মুসলমানদের উপর হামলা চালিয়ে বিজেপি রক্তপাতের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
মোদি হয়তো মনে করছেন যে তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, রাজনৈতিক সুবিধার প্রয়োজনে তিনি ইচ্ছামতো সবাইকে উত্তেজিত অথবা প্রশমিত করতে পারবেন। এমনকি যদি তিনি কেবল ধর্মীয় গোঁড়ামির উপরেও নির্ভর করেন, অনেক হাই প্রোফাইল হিন্দু জাতীয়তাবাদী রয়েছেন যারা সত্য বিশ্বাসী। তাদেরকে সহজে সংযত করা যায় না, গুজরাতের বধ্যভ‚মি যেটা প্রমাণিত হয়েছে।
পাকিস্তান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধংদেহী বক্তৃতা, কাশ্মীরে তার বুকের ছাতি ফুলানো এবং নাগরিকত্বের বিষয়ে তার পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি ধর্মান্ধদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলেছেন। তিনি হয়তো বিষয়গুলো খুব বেশি দূরে সহিংসতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান না, কারণ তাকে একটি দেশ পরিচালনা করতে হবে, কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষীদের জন্য এইরকম কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
এক মাত্র আশার আলো হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ভারতীয় এর প্রতিবাদ শুরু করেছেন। অনেক হিন্দুও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা, যারা গত সপ্তাহে নাগরিকত্ব আইন স্থগিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তাদের এই বিষয়ে মনোযোগ দেয়া উচিত। তাদের উচিত এই আইনটি অসংবিধানিক ঘোষণা করে প্রমাণ করে দেয়া যে তারা মেরুদন্ডহীন নন। এবং বিশ্বের দুইটি বড় ধর্মের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করার পরিবর্তে, মোদির উচিত ভোটারদের হৃদয় জয় করতে অন্য পথের সন্ধান করা।