সংগ্রামের মিডিয়াভুক্তি বাতিল: শেখ মুজিবের পথেই হাঁটছে হাসিনা!
কথিত যুদ্ধপরাধী মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক সংগ্রামের মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। বাংলাদেশে যে কয়টি প্রাচীন পত্রিকা রয়েছে তার মধ্যে দৈনিক সংগ্রাম অন্যতম।
দেখা গেছে, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার সকল নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে প্রাচীন এই পত্রিকাটির মিডিয়াভুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। পত্রিকাটির অপরাধ-জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের দেওয়া বিভিন্ন সময়ের বক্তৃতা-বিবৃতি প্রকাশ করে।
জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার জন্য বিগত ১১ বছর ধরে শেখ হাসিনা যে নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম-হত্যা, শীর্ষনেতাদের ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যাসহ যে অমানবিক আচারণ করে যাচ্ছে তারই ধারাবাহিক অংশ হল দৈনিক সংগ্রামের মিডিয়া তালিকাভূক্তি দৈনিক সংগ্রামের মিডিয়াভুক্তি বাতিল বলে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তবে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের জন্য এটা নতুন কিছু নয় বলে মনে করছেন তারা। দেশ থেকে ভিন্ন মত দমনের লক্ষ্যে তারা অতীতেও সংবাদপত্র বন্ধ করেছে।
ইতিহাস বলছে, একদলীয় ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠাকালে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন শেখ মুজিবুর রহমান সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা ছাড়া দেশের বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পার না হতেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি কোনো আলোচনা ছাড়াই কয়েক মিনিটের মধ্যে জাতীয় সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ওই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশালের’ জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত সরকার জারি করে ‘দ্য নিউজপেপার অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’।
‘কালো’ ১৬ জুনের পর সারা দেশে চার শতাধিক পত্রিকার মধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চারটি দৈনিক পত্রিকা বের হতো। এগুলো হলো- দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টাইমস। যে ইত্তেফাকের জন্মই হয়েছিল আওয়ামী লীগকে সমর্থনের জন্য, সে পত্রিকার প্রায় দুই যুগের ইতিহাস মুছে ফেলে সরকারের নির্দেশে প্রথম পৃষ্ঠায় লিখতে হয়েছিল ‘প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা’। অবশ্য ১৫ আগস্টের পর ইত্তেফাক ২৪ আগস্ট আগের সিরিয়ালে ফিরে আসে আটষট্টি দিন পর এবং দৈনিক বাংলা তার আগের সিরিয়ালে ফিরে যায় ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর।
এরপর, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তার বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নামে আবার আঘাত হানে সংবাদপত্রের উপর। ১৯৯৯ সালে টাইম-বাংলা ট্রাস্টের চারটি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে প্রায় ৫০০ সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পথে বসায়।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর বাকশালী কায়দায় বন্ধ করে দেয় দেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল-চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি এবং জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আক্রমন করেছে দেশের প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের ওপর। ফ্যাসিবাদী কায়দায় পত্রিকাটির মিডিয়া তালিকাভুক্তি বাতিল করেছে। এখন থেকে পত্রিকাটি আর সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না। মিডিয়াভুক্তি বাতিল পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিলের প্রাথমিক পদক্ষেপ মনে করছেন অনেকে। শেখ হাসিনা এখন যেকোনো সময় পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে পারে। তার লক্ষ্য হলো-জামায়াতের কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি যেন এদেশের মানুষের কাছে না পৌঁছতে পারে।