চোরচক্রের সর্দারসহ ৬ জন গ্রেফতার: ৫০ বছর ধরে ৫০০ এর বেশি চুরি করেছে চক্রটি
রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবনে দরজা ভেঙে স্বর্ণালংকার এবং টাকা-পয়সা চুরিচক্রের সর্দার ও দোকানদারসহ ৬ জনকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আসামিরা হলেন- চোর চক্রের সর্দার মো. জব্বার মোল্লাহ (৬৭), মো. জামাল সিকদার (৫২), মো. আবুল (৫১), আজিমুদ্দিন (৫২), টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আনোয়ার হোসেন (৪৪) এবং তাঁতিবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকান মালিক মো. আব্দুল ওহাব (৪৫)। ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করেন তারা। এভাবে ৫০ বছর ধরে ৫০০ এর বেশি চুরি করেছে চক্রটি।
রোববার (৯ অক্টোবর) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর খিলক্ষেত থানায় করা চুরি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা তাদের প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শনিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর পল্লবী ও তাঁতিবাজার এলাকা এবং গাজীপুরের টঙ্গী থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৯ ভরি স্বর্ণ, ৮২ ভরি রূপা, নগদ প্রায় ১৭ লাখ টাকা, দরজা ভাঙার যন্ত্রপাতি এবং মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রথমে বাসা-বাড়ির ছাদে রোদে দেওয়া জামাকাপড় চুরি। সেই চোরাই মাল বিক্রি করতে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর তারা একসঙ্গে চুরি করা শুরু করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১৫নং রোডে চিকিৎসক দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় চুরি হয়। দারোয়ান ও সিসিটিভি না থাকার সুযোগে চোরচক্রের সদস্যরা বাসায় ঢুকে তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর আলমারির লক ভেঙে ভেতর থেকে ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪০০০ ইউএস ডলার চুরি করে। এ ঘটনায় ডিএমপির খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্র থেকে আরও জানা যায়, গত ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করেন আসামিরা। চুরি করার আগের দিন তারা কথা বলে ঠিক করে নিতেন কোথায় চুরি করা হবে। সেই মোতাবেক পরদিন সকালবেলা তারা ওই এলাকায় হাজির হতেন। একসঙ্গে চা পান করার পর তারা হাঁটতে থাকেন এবং খেয়াল করে দেখেন কোন বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
বাসা টার্গেটের পর দুইজন বাসার ভেতরে প্রবেশ করে, বাকি ২-৩ জন বাইরে পাহারায় থাকেন। ১০ মিনিটের মধ্যে চুরি শেষ করে মালামাল ভাগ করে নিয়ে যে যার যার এলাকায় চলে যান। পরদিন আবার অন্য কোথাও চুরির পরিকল্পনা করেন। তারা শুধুমাত্র মূল্যবান অলংকার ও বিদেশি কারেন্সি, টাকা ইত্যাদি চুরি করতেন। চোরাই স্বর্ণালংকার ঢাকার তাঁতিবাজারের দুটি দোকান এবং গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। তারা শত শত ভরি স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য অলংকার ও পাথর তাঁতিবাজার এবং টঙ্গী বাজারে বিক্রি করতেন।