সরকারের দুর্নীতি ও চুরির তথ্য ঢেকে রাখতে ২৯ বিভাগে সার্কুলার: মির্জা ফখরুল
দুর্নীতি ও চুরির তথ্য ঢেকে রাখার জন্য সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে না পারে, আমাদের গণমাধ্যম যাতে সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য ২৯টি বিভাগকে সার্কুলার দিয়েছে যে, তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য নেওয়া যাবে না, তারা কাউকে কোনো তথ্য দেবে না।’
‘তারা কাউকে কোনো খবর দেবে না। এর অর্থ হচ্ছে, তারা দুর্নীতি ও চুরি ঢেকে রাখতে চায়, সঠিক খবর থেকে তারা সমস্ত দেশ ও জাতিকে বঞ্চিত রাখতে চায়।’
দলীয় কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত কর্মীদের স্মরণে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোকমিছিল পূর্ব-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করে সরকার। গত ২১ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। তথ্য পরিকাঠামো হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হলো। সেখানে আরও বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।
‘নিজের স্বেচ্ছাচারিতা ঢেকে রাখার জন্য সরকার আজ সমগ্র জাতিকে সঠিক খবর থেকে বঞ্চিত রাখছে’— দাবি করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দেশ এখন কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এ সরকার।
ফেসবুকে লেখালেখির কারণে এক মামলায় রাজবাড়ীর মহিলা দলের নেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা কি গড, বিধাতা, সৃষ্টিকর্তা যে তার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না?’
‘কী তার অপরাধ? অপরাধ, তিনি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, লিখেছেন হাসিনার বিরুদ্ধে। আপনি কি গড, বিধাতা যে আপনার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলা যাবে না? একটা গণতান্ত্রিক দেশে যে কারও সমালোচনা করার অধিকার আছে। প্রত্যেকটি মানুষের রয়েছে।’
‘প্রতিদিন এ স্বৈরাচার সরকারের পতন মিছিলে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের বাঁচার জন্য হাসিনা সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।’
‘সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যায় না। এ সরকার জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে তাকে অপসারণ করতে হবে। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, জেগে উঠেছে আমাদের তরুণ-যুবকরা। আজ আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, পেছনে ফিরব না।’
পুলিশের গুলিতে নিহত পাঁচ নেতার স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা এ দেশকে স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তারা সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। অসংখ্য আহত হয়েছেন। কারও চোখ চলে গেছে এবং কারও বুক চলে গেছে। অসংখ্য মামলা হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। স্বৈরাচারী এ সরকারের পতনের লক্ষ্যে প্রতিদিন মিছিলে মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ছে।’
সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক রক্ত আমরা দিয়েছি। আমরা আরও রক্ত দেব। কিন্তু এ দেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।