শেখ হাসিনার সরকার সারা বাংলাদেশে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ সৃষ্টি করেছে: মির্জা ফখরুল
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহাজারির কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তুলেছেন, এই আর্তনাদ, আহাজারি আর কতদিন চলবে?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন গুম হয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর একদিন তাকে ভারতের শিলংয়ে পাওয়া গেল। তিনি রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরছেন। তারপর এখন পর্যন্ত তিনি দেশে আসতে পারেননি। আমাদের এখানে সবাই বসে আছেন। এই যে তুলি তাদের বাসায় আমি বহুবার গিয়েছি। তার মা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেছেন। গতকালও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন— আমি আমার ছেলেকে ফিরে চাই। এই আর্তনাদ, আহাজারি আর কতদিন চলবে?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম, স্কুল-কলেজে পড়েছি, তখন গুম শব্দটি আমরা শুনিনি। যখন ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি তখন শুনেছি লাতিন আমেরিকাসহ যেসব দেশে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর শাসন চলছিল সেইসব দেশে মানুষ গুম হয়ে যেত। আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কী দুর্ভাগ্য আমাদের যে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল সেই দেশে আজকে শিশুদের, সন্তানদের আহাজারি শুনতে হচ্ছে। তারা তাদের বাবাকে ফিরে চায়, ভাইকে ফিরে চায়, মা তার সন্তানকে ফিরে চায়। আজকে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেপে উঠছে। আজকে আমাদের সামনে যারা বসে আছে এরা সবাই আমাদের ভাইয়ের সন্তান, আমাদের সহকর্মীর ভাই অথবা আমাদের সহকর্মীর বোন-মা। তাদের অপরাধ কী ছিল? তাদের অপরাধ একটাই তারা একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে তাদের অধিকার নিয়ে বাস করতে চেয়েছিল। আজকে শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছর ধরে আমাদের সেই অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আজকে গজারিয়াতে আমাদের লোকেরা এই গুম দিবসের অনুষ্ঠান করছিল। সেখানেও পুলিশ তাদের ওপরে আক্রমণ করেছে। সারা বাংলাদেশে এরা একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। ভয় দেখিয়ে গুম করে খুন করে এরা রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মিথ্যাচারের জন্য নোবেল পুরস্কার দিতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যিনি প্রধান, তিনি কিছুদিন আগে এসেছিলেন। তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রীদের তিনি বলেছেন যে, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রতিটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন এবং সেগুলোকে তিনি অ্যাড্রেস করতে বলেছেন। র্যাব যে এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সে বিষয়ে কথা বলেছেন। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে খুব পরিষ্কার করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এখানে গুমের অভিযোগ আছে এবং গুম হচ্ছে। সবশেষে তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোর জন্য জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। এজন্য জাতিসংঘ সমস্ত রকম সমর্থন সহযোগিতা করবে। সবশেষে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন— এখানে সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে। এই শান্তিমিশনে জড়িত কোনো কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত আছে কিনা, তা দেখাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এই ইঙ্গিতগুলো এই কথাগুলো সাধারণ কথা নয়।
তিনি বলেন, এই সরকার তাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার জন্য জাতিকে অপমান করে অভিযুক্ত একজন পুলিশ অফিসারকে তিন দিনের ভিসা নিয়ে জাতিসংঘের প্রোগ্রামে গেছে। প্রচার করছে যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। ডাহা মিথ্যা কথা। আপনারা জনগণকে প্রতারণা করছেন। মানবাধিকার কমিশনের প্রধান পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের অভিযোগ আছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। আমিও আজকে এই গুম প্রতিরোধ দিবসে উপস্থিত সন্তানদের সাথে দাবি করছি, ঘোষণা করছি যে, জাতিসংঘের অধীনে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। অন্যথায় ওই সমস্ত সরকারপ্রধান, যারা অতীতে গুম করেছে তাদের যেভাবে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, আপনাদেরও সেভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যারা এখানে উপস্থিত তাদের বাবা, ভাই, ছেলেদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সরকার আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। কোনো লাঠিয়াল বাহিনীতে কাজ হবে না। মানুষ জেগে উঠছে। আমরা সব তরুণ-যুবকদের আহ্বান জানাচ্ছি, এই দেশকে রক্ষা করার জন্য সবাই এগিয়ে আসুন। এই শিশুদের বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলি যে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের সরকার গঠন করতে পারব।