সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদকের বিস্তার রোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালিত হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদকের বিস্তার রোধে যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আমরা মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করছি। বিনা কারণে আমরা রক্তপাতও দেখছি। মাঝেমধ্যে মিয়ানমার থেকে মাদকের আনাগোনাও লক্ষ্য করছি। এটার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভ্যন্তরে গোয়েন্দা কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, সেসব অভিযানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার তো আছেই; যদি প্রয়োজন হয় সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরাও যুক্ত হবেন। ওখানে এপিবিএন কাজ করছে।
রোববার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পঞ্চম সভা শেষে তিনি একথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে ও বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সন্বিতভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার, পুলিশ, এপিবিএন- যৌথভাবে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে অভিযান পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন আমাদের এখানে অবস্থান করার কারণে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছি। আমরা বারবার প্রচেষ্টার পরেও তাদের দেশে যাওয়ার যে প্রক্রিয়াটা তাদের অনীহার কারণে শুরু করতে পারিনি। তারপরেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝে মধ্যেই আমরা রক্তপাত দেখছি, আমরা সন্ত্রাস দেখছি।’
‘অস্ত্র দ্বারা তারা রক্তপাত করছে, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এগুলো কোথা থেকে আসে কিভাবে আসে আমরা এ নিয়ে তথ্য প্রকাশ করবো শিগগির। এরা মিয়ানমারের মোবাইল ব্যবহার করে এতে আমরা ক্রিমিনালদের শনাক্ত করতে পারছি না। আমরা যেটা চাচ্ছি তারা যেন আমাদের দেশি মোবাইল ব্যবহার করে। আমরা যেভাবে মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করি সেভাবেই করবো। আমরা একটি এসওপি করবো।’
সভায় নেয়া অন্যান্য সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো কেন হচ্ছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন প্রায় শেষের দিকে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টহল রাস্তাও কিছুটা বাকি আছে, শেষের দিকে। ওয়াচটাওয়ার সেখানে হবে। তারা যেন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা করছি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে জন্মনিরোধের জন্য একটি এসওপি তৈরির কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইসলামি ফাউন্ডেশন এ নিয়ে কাজ করছে। ঘরে ঘরে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন এবং সচেতন করছেন। মসজিদের ইমাম ও এনজিওরাও এ বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন।’
‘নাফ নদী যেটা আমাদের মাদক আনা-নেওয়ার রুট সেখানে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে মাদক চোরাচালান বন্ধে অভিযান যেটা ছিল সেটা আরও জোরদার করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নিতে আগ্রহ জানিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিতে যেসব দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। আমরা আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনো দেশ যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন, তারা কী পরিমাণ নেবেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা সেগুলোই খতিয়ে দেখছি। এখনও কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি।’