গণজোয়ার দেখেই আমার প্রতিপক্ষ আতিকুল ইসলাম মানসিকভাবে অশান্তিতে আছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রচারের মাঠে উত্তাপ বাড়ছে। প্রচারে হামলার পর ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন তারা। নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে ভোটারদের উৎসাহিত করছেন। একই সঙ্গে সুন্দর ঢাকা গড়তে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র প্রার্থীরা দাবি করেছেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভয় পাচ্ছেন।
উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, জনসংযোগে গণজোয়ার দেখেই আমার প্রতিপক্ষ আতিকুল ইসলাম মানসিকভাবে অশান্তিতে আছেন। তাই তিনি সত্য ঘটনাকে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তার ওপর হামলার ঘটনায় এখন তিনি নির্বাচন কমিশনের তদন্তের অপেক্ষায় আছেন বলেও জানান। আর দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের ওপর জাতীয় গুরুদায়িত্ব রয়েছে, তা নির্ভয়ে পালন করুন। জনগণের পক্ষ হয়ে কাজ করুন, জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। ঢাকা শহর হবে শান্তির জনপদ। এখানে কোনো সন্ত্রাসীর স্থান হবে না।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রচারের ১৩তম দিনে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীক্যাম্পের সামনে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। আর বেলা সাড়ে ১১টায় পশ্চিম হাজারীবাগের ঝাউচর বাজার থেকে গণসংযোগ শুরু করেন ইশরাক হোসেন।
গণসংযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেন, আমার ওপর হামলায় আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুজিব সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাকে চিহ্নিত করে হামলা করেছেন, যাতে আমি মাথা ও মুখে আঘাত পাই। এখন পুলিশকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছেন। গত রাতে (মঙ্গলবার) এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দাখিল করতে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।
‘বিএনপি নির্বাচন করছে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করছে’- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যর জবাবে তাবিথ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আজ বাংলাদেশের বৃহত্তর জনমানুষের মুক্তির সংগ্রাম। তারা ভোটের মাধ্যমে রায় দিতে চান। কারণ তারা দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে প্রশ্রয় দেবেন না। খালেদা জিয়ার মুক্তি সবার মুক্তিসংগ্রামকে একত্র করবে। তাবিথ আওয়াল যখন হাজীক্যাম্পের সামনে পথসভা করছিলেন, তখন সড়কের বিপরীত পাশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
সাংবাদিকরা দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, আমরা কোনো অবস্থাতেই কখনো মুখোমুখি হইনি। আমি অনেক আওয়ামী কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছে ভোট চেয়েছি। হাত মিলিয়েছি। শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। আজও লক্ষ করেছি, আমাদের নেতা আ স ম আবদুর রব যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, রাস্তার উল্টোদিকে আওয়ামী নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। তারা বক্তব্য শুনছিলেন। তারা সমর্থন করে একমত হয়েছেন। তাতে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের দু-একজন বিশেষ মহলের নেতার আচরণ দেখে তারাও বিরক্ত হচ্ছেন। ঘৃণা করছেন।
মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অভিযোগ দাখিল করেছি। আমরা দেখব নির্বাচন কমিশন তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করে কী প্রতিবেদন দেয়। কমিশনের উচিত ছিল নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে তৎপর হওয়া। ম্যাজিস্ট্রেটরা সরকারের বেতন নিচ্ছেন, অথচ দায়িত্ব পালন করছেন না।
হাজীক্যাম্পের সামনে গণসংযোগকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রব বক্তব্য দেন। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ধানের শীষে ভোট চেয়ে বলেন, ধানের শীষে ভোট দিলে দেশের মানুষ শান্তি পাবে, মুক্তি পাবে। আপনারা ভোট দিতে যাবেন, কারও কথা শুনবেন না। ভোট দিয়ে বিকাল ৪টার পর রেজাল্ট না নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না। প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা কারচুপি করলে রুখে দাঁড়াবেন।
এ সময় তাবিথের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে শামা ওবায়েদ, সাইফুল আলম নীরব, কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন, গফুর ভূঁইয়া, নজরুল ইসলাম আজাদ, ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন (টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক), ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবরসহ (টিফিন ক্যারিয়ার) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হাজীক্যাম্প থেকে তাবিথ দক্ষিণখানের প্রেমবাগান, গাওয়াইর হয়ে চেয়ারম্যানবাড়ী ও থানা রোডে জনসংযোগ করেন। এরপর কাওলা স্টাফকোয়ার্টার, ৪৮নং ওয়ার্ডের নাগরিয়া বাড়ি, প্রতিবন্ধি সংস্থা, ৪৪নং ওয়ার্ডে দোবাদিয়া বাজার, কাচকুড়া, ৫০নং ওয়ার্ডের কসাইবাড়ী, আজমপুর কাঁচাবাজারে গণসংযোগ চালান। সেখান থেকে উত্তরা ৪, ৬, ৮ ও ৯নং সেক্টর পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তিনি রাস্তায় সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন। বয়োজ্যেষ্ঠ অনেকে তাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন।
ইশরাক যা বললেন : দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, আজ এ শহরটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের একটা পরিবর্তন দরকার। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি নগরবাসীর জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক, জনগণ হবে রাষ্ট্রের মালিক। সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। বুধবার গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। ঝাউচর বাজার থেকে গণসংযোগ শুরুর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের গণসংযোগে ও সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, আজও (বুধবার) এখানে আসার আগে আমাদের প্রচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বলে দিতে চাই, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোনো ষড়যন্ত্র বাধা আমরা মানব না। এই দেশটা আমাদের সবার। আমরা কারও জমিদারিত্ব মানব না।
ইশরাকের প্রচারে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ইশরাক যোগ্য প্রার্থী, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন। মনেপ্রাণে সবাই মিলে এ আশা পোষণ করি, আমরা বয়স্করা যেখানে ব্যর্থ হয়েছি, ইশরাক হোসেনের মাধ্যমে আমরা সেটা পূর্ণ করব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবীব উন নবী খান সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকুসহ বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক।
কামরাঙ্গীরচরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার যান ইশরাক। সেখানে গণসংযোগকালে রাস্তার দু’পাশে মার্কেটের বেশকিছু দোকানি ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে অভিনন্দন জানান ইশরাককে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা ‘গ্রেফতার হব জেলে যাব, ১ তারিখে কেন্দ্রে যাব; ঢাকার ছেলে ইশরাক ভাই- ধানের শীষে ভোট চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। এ সময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ইশরাক বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান, ঢাকার সন্তান। তাই পুরো ঢাকাবাসী আজ এক হয়েছে।
আমার বাবা বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে ঢাকাবাসীকে আমার পাশে দেখে উনি অবশ্যই খুশি হতেন, গর্বিত হতেন। এছাড়া ইসলামবাগ ঈদগাহ মাঠে পথসভা শেষে লালবাগসহ ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেন ইশরাক।