স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ওসির বিরুদ্ধে
বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। একইসাথে তাকে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে আলামত নষ্টের অভিযোগে ধর্ষণ মামলার বাদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বগুড়া পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুল (৪৮) গত বছরের অক্টোবরে ধুনট পৌর এলাকার দক্ষিণ অফিসারপাড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ওই বাসার মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। মুরাদুজ্জামান একদিন কৌশলে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন। গত ১২ মে আবারো ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকারে দেয়। এ সময় স্বজনেরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন মুরাদুজ্জামান। পরে ওই ছাত্রীর মা তার বিরুদ্ধে গত ১২ মে ধুনট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেফতার ও অশালীন ভিডিও ধারণ করা মুঠোফোন জব্দ করে। মুরাদুজ্জামান বর্তমানে বগুড়া কারাগারে আছেন।
বাদির লিখিত অভিযোগে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা নিজেই। ১৮ মে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজত থেকে আরো একটি মুঠোফোন জব্দ করেন। ওই মুঠোফোনে পাওয়া কয়েকটি অশালীন ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ও মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা। কিন্ত ওসি আসামি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে মামলার আলামত নষ্ট করার জন্য গত ১৯ মে জব্দ করা মুঠোফোন দুটি তিনি আদমদীঘি থানার একজন উপ-পরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে ফোনে থাকা সব ভিডিও ক্লিপ ও তথ্য মুছে ফেলেন। এরপর শুধু ওই দুটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। মুঠোফোন দুটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তদন্ত যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তভার ডিবির কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলার বাদির অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে তাকে (ওসি ) সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষা ও তদন্তে মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণের প্রমাণ পাওয়া গেলে আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আরো মামলা হবে। এ ছাড়া মুঠোফোন থেকে ভিডিও মুছে ফেলার দায়ে ওসির বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।