সরকারের তরফ থেকে আশ্বস্ত করলেও জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

0
দেশে বর্তমান জ্বালানি সংকট আগামী দুই মাসের মধ্যে কেটে যাবে বলে সরকারের তরফ থেকে আশ্বস্ত করলেও ভবিষ্যতে জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয় ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

 

আজ বুধবার (১১ আগস্ট)  জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই আশঙ্কার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম।

 

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করার তাগিদ দেন তারা।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটঃ নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের মূল  প্রবন্ধে তিনি বলেন,  বিশ্ববাজারে এলএনজি জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি সহসা থেমে যাবে না বরং ইউরোপিয়ান দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাস না পাবার ফলে এলএনজি বাজারে নামছে একই সঙ্গে এর  মূল্য বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।

 

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি উপর অধিকতর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশকে  আরো আর্থিক সংকটে ফেলবে । এ সংকট সমাধানের উপায় হিসাবে দেশিয় গ্যাস মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গ্যাস সম্পদ মূল্যায়ন সংস্থাসমূহ একমত পোষণ করেন যে বাংলাদেশে এখনও অনাবিষ্কৃত গ্যাস পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে।

 

ড. বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশে ’৭০ এর দশক থেকে ক্রমাগতভাবে বাৎসরিক গ্যাস উৎপাদন হার বেড়েছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরও উৎপাদন বৃদ্ধির হার অব্যাহত ছিল এবং ২০১৬ সালে তা সর্বোচ্চ ৯৭৩ বিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছে। কিন্তু ২০১৭ থেকে বাৎসরিক গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ কমতে থাকে।

 

গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানী শুরু হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববাজারে এলএনজি মূল্য বৃদ্ধি এবং তারপর রাশিয়া- উক্রেইন যুদ্ধ এলএনজি স্পটে মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে।

 

পেট্রোবাংলা হিসাব মতে এলএনজি  আমদানি করতে প্রতি বছর ৪৪০০০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং তা কেবল মোট গ্যাস সরবরাহের ২০% মেটায় । বাকী ৮০% সরবরাহকৃত গ্যাস আসে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন থেকে যার জন্য খরচ হয় ২০০০০ কোটি টাকার কম।

 

বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয় এবং প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে আনা হয়। প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাৎ দেশের গ্যাস উৎপাদন প্রতিদিন ১৫০০ মিলিয়নে নেমে যেতে পারে এবং তখন এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে গ্যাস ক্রয় বেড়ে ৩০০০ মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছবে বলে প্রাক্কলন করা হয় ।

 

দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনায় মূল ভূ-খণ্ডে ও সাগরবক্ষকে ব্যাপক গ্যাস অনুসন্ধানের আওতায় নিয়ে আসা ।

 

এটি দুঃখজনক যে বাংলাদেশ অতি গ্যাস সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও এখানে অনুসন্ধান কূপের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য গ্যাস ধারক বেসিনসমূহ থেকে অনেক অনেক কম। পার্শ্ববর্তী ভারতের একটি ছোট রাজ্য ত্রিপুরা (১০,০০০ বর্গকিমি) এপর্যন্ত অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে ১৭০টি, অথচ বাংলাদেশে (১৪৭,০০০ বর্গ কি.মি) অনুসন্ধান কূপের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি।

 

সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধান কাজের ধারা আরো হতাশাব্যঞ্জক। ২০১২ সালে বাংলাদেশি মিয়ানমার সমুদ্রসীমানা বিরোধ নিস্পত্তি হবার পর থেকে আজ অবধি মিয়ানমারের সমুদ্রবক্ষে অনেক সংখ্যক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলেও বাংলাদেশে তা হয়নি (পরবর্তী স্লাইডে ম্যাপ লক্ষ্য করুন)।

 

তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক  আনু মোহাম্মদ বলেন, আজকে আমরা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে সংকট টা দেখতে পাচ্ছি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে পুরো অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটা খুব আকস্মিক বা হঠাৎ করেই হয়েছে বিষয়টা এমন না। যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে এটা তৈরি করার মতোই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিদ্যুৎখাতে আমাদের প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে নাগরিক থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে সরকার যে ভর্তুকি দিচ্ছে এই ভর্তুকির সুবিধা কারা পাচ্ছে?

 

গত ১১ বছরে এরকম টাকা দেওয়া হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ১২ টা এরকম কোম্পানিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে।

 

দেশ এখন খাদের কিনারে বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

 

তিনি বলেন, আমরা সংকটের মধ্যে আছি। আরো ভয়াবহ সংকটের দিকে যাব। আমরা খাদের কিনারায় এসে গিয়েছি, জানি না এর পরিণতি কি হবে।

 

তিনি বলেন, দেশে এখন চলছে ভাই-ব্রাদারতন্ত্র। সেই সঙ্গে আছে মতলববাজির উন্নয়ন। যার মধ্যে আমরা নিপতিত হয়েছি।

 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, জ্বালানির সংকট আমাদের অনিবার্য ছিল না। এটা অনিবার্য করে তোলা হয়েছে। একসময় বলা হয়েছিল বাংলাদেশ গ্যাসের উপরে ভাসছে। এর পিছনে একটা উদ্যেশ্য ছিল যে গ্যাসটা রপ্তানি করা।

 

এরপরে বলা হলো আমাদের গ্যাস নাই এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম। যদিও সরকার ২০১০ সালে নরওয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে যেই সনদটা করেছিল সেখানে শুধু স্থলভাগেই ৩৪ থেকে ৩৮ টি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com