জবরদখলকারী সরকারকে বিদায় না করতে পারলে জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়: এবি পার্টি

0

বন্যা ও নদী ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, বন্যায় যারা বার বার ঘরবাড়ি হারাচ্ছে, মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে তারা সবাই রাষ্ট্রের কাঠামোগত নির্যাতন ও খুনের শিকার বলে দাবি করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, সিলেট অঞ্চলসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নদীভাঙন নিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিং থেকে এ দাবি করেছে এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ।

পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব এম আমজাদ খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

মূল বক্তব্যে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গতকয়েক বছর ধরেই মার্চ-এপ্রিল মাসে ভারতের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট অঞ্চলের হাওরসহ প্রতিটি জনপদ। অন্যদিকে সারা বছর পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকার সকল পানি নানা খাল দিয়ে প্রত্যাহার করে নিলেও ভারত অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যার সময় সকল বাঁধের গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে প্লাবিত করে আসছে বছরের পর বছর। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয় মুলত সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে কিন্তু এধরণের আকস্মিক বন্য আগে দেখা যায়নি।

পরিবেশবিদরা বলছেন, এর প্রধানতম কারণ নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। যেটা মূলত হয়ে থাকে নদীমূখে বিভিন্ন পয়েন্টে পলি, বালু জমে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে এবং শহরে বসবাসরত মানুষের সকল ধরনের বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে। দেশব্যাপী এই চলমান বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে নদীগর্ভে প্লাস্টিক জমে প্রায় নদীর গভীরতা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত নদীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন খাল, বিল, পুকুর, দিঘী অবৈধভাবে ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করা। তৃতীয়ত ৮৭৫ কোটি টাকার কিশোরগঞ্জের ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইনের ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ অল-ওয়েদার সড়ক। হাওড়ের বুক চিরে মিথ্যে উন্নয়নের নামে রাস্তা তৈরি করে পরিবেশের সঙ্গে খেলতে নামার এক আলেখ্য যেটাতে মানবজাতি কোনওদিন বিজয়ী হতে পারবে না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের একমাত্র বন্ধু রাষ্ট্রের সময়ে-অসময়ে দেয়া অতিরিক্ত পানির প্লাবন।

বন্যার সঙ্গে পদ্মা, যমুনা ও তিস্তায় এখন শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। যার ফলে প্রতিদিন বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এত কিছুর পরেও জনসমর্থনহীন ফ্যাসিবাদী সরকার বরাবরের মতোই নীরব, মনে হচ্ছে তেমন কিছুই যেন তাদের করার নেই। হীরক রাজার দেশে কোনো কিছুই তেমন কোনো বড় সমস্যা না। বন্যাতে মারা যাওয়া, কিংবা নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া দুখী মানুষদের ব্যপারে সরকারের উদাসীনতার সমলোচনা করে তিনি বলেন, ৪০ লক্ষ পানিবন্দি ও হাজার হাজার নদী ভাঙনকবলিত মানুষের জন্য ১০/১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে মনে হচ্ছে যেন সরকার অনেক বড় সাহায্য করে ফেলেছে। অথচ দেশে ৫ লক্ষ শিশুকে সাঁতার শেখানোর জন্য ২৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, সুন্দরবনের পশু গণনার জন্য ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, ২০টি সিনেমা তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়!

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবি পার্টি বরাবরই দাবি করে আসছে যে, বন্যা ও নদী ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, বন্যায় যারা বার বার ঘরবাড়ি হারাচ্ছে, মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে এরা প্রকৃতির স্বাভাবিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নয় বরং তারা সবাই রাষ্ট্রের কাঠামোগত নির্যাতন ও খুনের শিকার। রাষ্ট্রের এই ব্যর্থতার পাটাতনে দাঁড়িয়ে এবি পার্টি তাই আবারো জাতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, অধিকারের রাজনীতি কেন এত জরুরী। বন্যা ও নদী ভাঙ্গন জাতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের আলোকে – সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের মেরামত ও বিনির্মাণের এই উদ্যোগ নিতে হয়েছে এবি পার্টিকে।

সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, সরকার বিনা রশিদে জনগণের নিকট থেকে ট্যাক্স আদায় করছে। সেই ট্যাক্সের টাকা আওয়ামীলীগের লুটেরা শ্রেনী লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। জাতির দুর্ভাগ্য এই ধরনের চোর বাটপার যারা জনগণের টাকা লুট করছে তারা সরকারের সর্বত্র দখল করে আছে। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাই এই দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার। তিনি বলেন, এই জবরদখলকারী সরকারকে বিদায় না করতে পারলে জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com