থলের বিড়াল বেরিয়ে আসায় অভিযান থমকে গেছে : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের মধ্যে ইলিউশন তৈরি করার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো , জুয়া এবং মাদকবিরোধী কথিত শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিল। ৬-৭ জনকে ধরার পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার কারণে সেই লোক দেখানো অভিযান থমকে গেছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগের মাঝারী নেতাদের ঘরে অবৈধ টাকার সিন্দুক, ভল্ট, টাকশাল, কাড়িকাড়ি টাকা, সোনা-দানার খনি আবিষ্কার হওয়ার পর বড় নেতারা সঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

রবিবার দলের নয়া পল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ সব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, চারদিক থেকে যখন রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযানের দাবি জোরালো হচ্ছে তখনই থামিয়ে দেয়া হয়েছে অভিযান। রাঘব বোয়াল ও দুর্নীতির রথি মহারথীদের সুতোর টানে এগুতে পারছে না অভিযান। সরকারের নেতারা বলছেন, সুশাসনের আমেজ দিতেই নাকি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। হাস্যকর এই চমক আর আমেজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো চুনোপুটিদের অফিস বাড়িতে সিন্দুকে শত শত কোটি টাকার স্টক। সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছে- রাঘব বোয়ালদের কাছে রয়েছে লুট হওয়া লক্ষ কোটি টাকা। গতকাল খুলনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গত ১০ বছরে দেশের ৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’সরকার দেশকে হরিলুটের নরকপূরী বানিয়েছে। টেলিভিশনের খবরে বলা হচ্ছে ক্যাসিনোর চেয়েও বড় দুর্নীতি হয় পরিবহন সেক্টরে- কেবল রাজধানীতেই প্রতিদিন ১০/১২ কোটি টাকার চাঁদা ওঠে। অথচ শাজাহান খানরা ধরাছোয়ার বাইরে। তাই দুর্নীতি, মাদক, জুয়া ও কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন চালাতে চাইলে বিনাভোটের অবৈধ দুর্নীতিবাজ সরকারকে মাথায় বসিয়ে রেখে সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এখন নানারকম মিথ্যাচার এবং ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে হচ্ছে। দুর্নীতি বিরোধী কথিত অভিযানে সরকারের দুর্নীতির নগ্ন চেহারাই উম্মোচিত হয়নি, এই সরকার নিজেদের দলীয় স্বার্থে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ‘কতটা অথর্ব অপদার্থ প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করেছে তারও নির্লজ্জ প্রমাণ মিলেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজানা ছিল না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদেরকে সরকারের দলীয় বাহিনী হিসেবে পরিণত করায় এতদিন তারা কাসানোতে অভিযান চালাতে সাহস করেনি। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে গেছে, দেশের ব্যাংকগুলো খালি হয়েছে আর বেড়েছে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ। ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে এখন ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংকসহ ১১ টি ব্যাঙ্ক এখন মূলধন সংকটে।

রিজভী বলেন, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ কি কারণে আমাদের ইতিহাসের দুইজন অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়ার রহমানকে মুখোমুখি করার অপপ্রয়াস সত্যিই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের দাবি, শেখ মুজিবুর রহমান দেশে মদ জুয়া নিষিদ্ধ করেছেন। আর জিয়াউর রহমান দেশে মদ জুয়া আইনসিদ্ধ করেছেন। এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ক্যাসিনো সংক্রান্ত কোনো আইন নেই।

তিনি আরো বলেন, সরকার যদি মনে করে, দুর্নীতির জন্য অন্যদল থেকে আওয়ামী লিগে যাওয়া লোকজন দায়ী তাহলে সরকারের উচিত একসপ্তাহের মধ্যে সেসব দুর্নীতিবাজদেরকে তাদের দল থেকে জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করা। দুর্নীতির জন্য ইয়ংমেন্স ক্লাবের আড়ালে ফকিরাপুলের ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির জন্য শুধু খালেদ দায়ী কিন্তু নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী হওয়ায় ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান দায়ী হবে না, এমন একচোখা নীতি হলে দুর্নীতি কমবে না বরং বাড়বে। সত্যি সত্যি দুর্নীতিবাজে ধরতে চাইলে, চুনোপুটি নয়, দুর্নীতির সম্রাটদের ধরুন, তাদের রক্ষক রাজা-রানী বাদশাহদের ধরুন।

Comments (০)
Add Comment