নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর স্ত্রী কে এই ঊষা চিলুকুরি?

নির্বাচনে ট্রাম্প-ভ্যান্স টিকেট জয়ী হলে ৩৮ বছর বয়স্ক ঊষা চিলুকুরি ভ্যান্স হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত `সেকেন্ড লেডি’।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাড়ির গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মার সন্তান ঊষা চিলুকুরির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৮৬ সালের ৬ জানুয়ারি, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান ডিয়েগো শহরে। তাঁর তেলুগু-ভাষী বাবা এবং মা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের চিলাকালুরিপেতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

ঊষা চিলুকুরির বাবা ক্রিশ সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে একজন শিক্ষক এবং তাঁর মা লাক্সমি, যিনি একজন মেরিন মোলকিউলার বায়োলজিস্ট, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর সিক্সথ কলেজের প্রভোস্ট।

চিলুকুরির অ্যাকাডেমিক সাফল্য তাঁর বাবা-মার চেয়ে কম না, কিন্তু তিনি তাদের পথ অনুসরণ করে বিজ্ঞানের দিকে ঝোঁকেন নাই। বরং তাঁর আগ্রহ ছিল হিউম্যানিটিএস-এর দিকে।

স্থানীয় পত্রিকা দ্য সান ডিয়েগো টাইমস এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিলুকুরি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাড়ির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম, ইয়েল ইউনিভারসিটি থেকে ইতিহাসে ব্যাচেলর’স ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর ঊষা চিলুকুরি ব্রিটেনের শীর্ষ স্থানীয় বিদ্যাপীঠ কেমব্রিজ ইউনিভারসিটি থেকে আধুনিক যুগের শুরুর দিকের ইতিহাসে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর বিদ্যা অন্বেষণ সেখানেই থেমে যায়নি, এবং চিলুকুরি নজর দেন আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকে।

তিনি ফিরে যান ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার ল’ স্কুল থেকে তিনি ২০১৩ সালে ডক্টর অফ ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি’র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, একই সময় তিনি চীনের গুয়াংজুর সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়েল-চীন টিচিং ফেলও হিসেবে আমেরিকান ইতিহাস পড়ান।

ইয়েল ল’ স্কুলে পড়াশোনার সময়ই ঊষা চিলুকুরির পরিচয় হয় জে ডি ভ্যান্সের সাথে। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে।

টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, জে ডি ভ্যান্স ২০১৯ সালে প্রোটেস্টান্ট থেকে ক্যাথলিক ক্রিস্টিয়ান ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে ঊষা ভ্যান্স তাঁর পারিবারিক সূত্রে পাওয়া হিন্দু ধর্ম পালন অব্যাহত রাখেন।

টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স-এ দেয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ঊষা ভ্যান্স বলেন, হিন্দু ধর্মে তাঁর বাবা-মার বিশ্বাসই “তাদের এত ভাল মানুষ করেছে।” একই সাক্ষাৎকারে জে ডি ভ্যান্স জানান, তিনি যখন তাঁর ক্রিস্টিয়ান বিশ্বাসে ফিরে যান, তখন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর স্ত্রী তাঁকে সমর্থন করেছেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জে ডি ভ্যান্স বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি তাঁর স্ত্রীকে এক “শক্তিশালী কণ্ঠ” এবং “অসাধারণ” বলে বর্ণনা করেছেন।

“ঊষা আমাকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমি যদি কখনো একটু অহংকারী বা দম্ভী হয়ে যাই, তখন আমি নিজেকে মনে করিয়ে দেই সে আমার চেয়ে কত বেশি সুদক্ষ,” ভ্যান্স ২০২০ সালে “মেগান কেলি শো” পডকাস্টে বলেন। “আমি সেরকম একজন পুরুষ যার বাঁ কাঁধে বসে একটি শক্তিশালী নারী কণ্ঠ বলছে, “এটা করো না, এটা অবশ্যই করো’ – এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

ঊষা ভ্যান্স ল’ স্কুল থেকে পাস করার পর ২০১৫ সালে একটি ল’ চেম্বারে কাজ শুরু করেন যাদের লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিস্কো এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে অফিস আছে। চেম্বারের কাজের ফাঁকে তিনি প্রধান বিচারপতির দফতরে লিগাল ক্লার্কের কাজ করেছেন। সোমবার (১৫ জুলাই) ডনাল্ড ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তাঁর সঙ্গী হিসেবে জে ডি ভ্যান্সের নাম ঘোষণার পর ঊষা ভ্যান্স চেম্বার থেকে ইস্তফা দেন।

ডেমোক্র্যাট থেকে রিপাবলিকান

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যমতে, ঊষা চিলুকুরি ভ্যান্স ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক হিসেবে রেজিস্টার করা ছিলেন। তবে ২০২২ সালে তাঁকে রিপাবলিকান দলের রেজিস্ট্রেশনে দেখা যায়, যে বছর তাঁর স্বামী রিপাবলিকান টিকেটে ট্রাম্পের সমর্থনপুষ্ট হয়ে ওহাইও থেকে সেনেট নির্বাচনে জয়ী হন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, জে ডি ভ্যান্স বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশ করেছেন, যেমন তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়ার বিরোধিতা করেছেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনের উপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেন, তিনি বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী নেতাদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ঊষা ভ্যান্স তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে খুব একটা কিছু বলেন না।

গত মাসে ফক্স চ্যানেলে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় তাঁর স্বামী যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট হন, তখন তাঁরা যে মনোযোগ আকর্ষণ করবেন, সেটা তিনি কীভাবে সামলাবেন। জবাবে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না সে’ধরনের গভীর নজরের জন্য কেউ কখনো প্রস্তুত থাকে।” তাঁর স্বামীর ২০২২ সালে সেনেট নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ সেই প্রথম নির্বাচন ক্যাম্পেইন যেটায় সে অংশ নেয়, তাতে আমরা বড় ধাক্কা পেয়েছি, কিন্তু সেটা একটা অ্যাডভেঞ্চার ছিল। তবে জেডি’র উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, তাঁকে আমি ভালবাসি, কাজেই দেখা যাক কী হয়।”

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

Comments (০)
Add Comment