ঘাটাইলে আ.লীগ নেতার পকেটে গরীবের টাকা
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২২ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার অন্তর্গত ২০২১- ২০২২ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলার এই প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা হেকমত সিকদারের বিরুদ্ধে। ৪০ দিনের এই প্রকল্পে গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনের কাজ করার কথা থাকলেও তা করানো হয়নি। শ্রমিক নয় বরং মাটি কাটার বেকু দিয়ে নামে মাত্র কাজ করিয়েছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান। নিজের লোকদের মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, এই প্রকল্পের এই কাজে সাগরদীঘি ইউনিয়নের জন্য ১৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ৪০ দিনের ওই প্রকল্পে গ্রামের অসহায় হতদরিদ্র লোকজনের কাজ করার কথা থাকলেও তা করানো হয়নি। বরং শ্রমিকদের নামের তালিকায় রয়েছে কলেজ শিক্ষকসহ এলাকার সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মোট ৮১ জন ব্যক্তির নাম এই কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে। এদের একাংশের মোবাইল সিমকার্ডসহ তাদের পিন কোড কৌশলে হাতিয়ে নেয় চেয়ারম্যান। পরে ওই ভুক্তভুগীরা টাকা এবং সিমকার্ড কোনটিই ফেরৎ পাননি বলে অভিযোগ করেন। এ কর্মসূচির আওতায় শ্রমিক দিয়ে কোন কাজ হয়নি বলেও জানা যায়।
জানা গেছে, প্রকল্পের নানা অনিয়মের কথা। প্রকল্পের তালিতায় হতদরিদ্রের নাম থাকার কথা থাকলেও সেখানে নাম রয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের। কলেজের শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে পরিষদের কম্পিউটার অপারেটরের নাম। সিঙ্গাপুর ফেরত জোড়দিঘী এলাকার যুবলীগের নেতা মেহের আলীর নাম রয়েছে এই তালিকায়।
এ বিষয়ে মেহের আলী বলেন, আমার নাম তালিকায় থাকলেও আমি কোন টাকা পাইনি। কথা হয় ওই ইউনিয়নের কর্মসূচির তালিকায় থাকা কামালপুর ওয়ার্ডের আনোয়ারা, নার্গিজ, খাদিজা আক্তার এবং আব্দুর রহিম মিয়ার সাথে। তারা জানান, যাচাই-বাছাই করার কথা বলে হেকমত চেয়ারম্যান আমাদের সিমকার্ড এবং বিকাশের পিনকোডসহ নিয়ে যায় পরিষদে। পরে সিমকার্ড ফেরৎ চাইলে নানা টালবাহানা করেন। এসব ভুক্তভুগীরা প্রকল্পের কোন প্রকার টাকা পাননি বলেও জানান।
পাগাড়িয়া জালালপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিক মিয়ার জানান, চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার আমাকে ৯টি শ্রমিকের নামের মধ্যে তিনটি নাম দিতে বলেন। বাকি ৬টি চেয়ারম্যানের লোকদের দিবে বলে জানিয়ে দেন। ওই ইউপি সদস্য আরও জানান, আমার এলাকায় শ্রমিক দিয়ে এই প্রকল্পের কোন কাজ করা হয়নি। ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফরহাদ আলী বলেন, আমার ৭নং ওয়ার্ডে প্রকল্পের কোন হয়নি। সমস্ত টাকা চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে ভাগাভাগি করে খেয়েছেন।
সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার বলেন, এই অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, শ্রমিকদের নামের তালিকা করেছে স্থানীয় মেম্বাররা। সেখানে কোন অনিয়ম হলে শ্রমিকদের বিল দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনীয়া চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।