লাগামহীন চিকিৎসা ব্যয়: বেসরকারি খাতে স্বেচ্ছাচারিতার অবসান জরুরি
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মানুষ সেবা নিতে গিয়ে কতটা দুর্ভোগের শিকার হয়, বিষয়টি বহুল আলোচিত। এ অবস্থায় দুর্ভোগ এড়াতে এবং দ্রুত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় বেসরকারি হাসপাতালেই ভিড় করে সব শ্রেণির মানুষ। আর এতেই হয় সর্বনাশ। কারণ সেখানে একবার ঢুকলেই প্রতি মুহূর্তে বাড়তে থাকে বিলের অঙ্ক। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে মানুষকে কতটা হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়েই প্রতি বছর দেশে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। যে চিকিৎসক তার সরকারি হাসপাতালের কর্মস্থলে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখছেন, তিনিই যখন সরকারি হাসপাতালের বাইরে রোগী দেখেন, তখন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা ফি নিচ্ছেন। ওই চিকিৎসক সরকারি কর্মস্থলের বাইরে রোগী দেখার ফি ইচ্ছা হলেই যখন তখন বাড়িয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বলা যায়, মানুষ এসব চিকিৎসকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের দেখার কথা তারা কী করেন?
প্রত্যেক চিকিৎসকের পেছনেই জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাই যেসব চিকিৎসকের নীতি-নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। দুঃখজনক হলো, ফি বেশি প্রদান করা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে সেবার মান বাড়ছে না। সব সরকারি হাসপাতালে ব্রেনের সিটিস্ক্যানের জন্য নেওয়া হয় দুই হাজার টাকা, অথচ বেসরকারিতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এই একটি তথ্য থেকেই স্পষ্ট রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও বেসরকারি হাসপাতালে মানুষের কত বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। সরকারি চিকিৎসকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা উচিত। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ হাসপাতালের উন্নয়নে ব্যয় করা হলে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বাড়বে। বস্তুত চিকিৎসা খাতে মানুষের ব্যয় না কমলে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।