রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হিসাব মতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত বছরের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ২৬৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এই হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৫৮৩ কোটি টাকা কমেছে। তবে মোট খেলাপি ঋণ কমলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’-এর সাথে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী জুন শেষে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি আরো এক হাজার ৮৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, এপিএর চুক্তির আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) জনতা, বেসিক, সোনালী ও বিডিবিএল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ কমেছে তিন হাজার ৭৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে জনতা ব্যাংকের। এ সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি কমেছে এক হাজার ৮০২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
মজার বিষয় হচ্ছে, খেলাপি ঋণ কমলেও এখন জনতার খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। গত ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা (গত জুন শেষে স্থিতি ছিল ১৩,৬৯২.৮৮ কোটি টাকা)। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি রাখতে হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে ছয় মাসেই বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জন করেছে জনতা ব্যাংক।
ছয় মাসে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কমে গত ডিসেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি ৭ লাখ টাকা (গত জুন শেষে স্থিতি ছিল ৭,৯৮৬ কোটি টাকা)। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সাত হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি ১২৪ কোটি সাত লাখ টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
একইভাবে ছয় মাসে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি কমেছে ৪০৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা (গত জুন শেষে যা ছিল ১০,৩৯৫ কোটি টাকা)। এটি ছয় ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে ছয় মাসেই বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জন করেছে সোনালী ব্যাংক।
ছয় মাসে পাঁচ কোটি ১২ লাখ টাকা কমে গত ডিসেম্বর শেষে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা (গত জুন শেষে স্থিতি ছিল ৬৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা)। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে ছয় মাসে বিডিবিএল বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জন করেছে বিডিবিএল।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দুই (অগ্রণী ও রূপালী) ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ৪৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা (গত জুন শেষে স্থিতি ছিল ৫,৭০০ কোটি টাকা)। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে অগ্রণীর খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
অন্য দিকে ছয় মাসে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৫৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা (গত জুন শেষে ছিল ৩,৮৬৪.৫৬ কোটি টাকা)। এপিএর আওতায় চলতি অর্থবছর শেষে রূপালীর খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে চার হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের স্থিতি এক হাজার ৫৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ঋণ অবসায়ন করার কারণে তাদের ঋণের পরিমাণ কমেছে। তবে খেলাপি খাতা কলমে কমলেও এপিএর আওতায় তাদের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা অর্জন করা ব্যাংকগুলোর পক্ষে সম্ভব হবে না।