দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পে অস্বাস্থ্যকর অগ্রগতি বিরাজ করছে
দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পে অস্বাস্থ্যকর অগ্রগতি বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছ’মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৯.৮৪ শতাংশ অগ্রগতি স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রকল্পের। যেখানে এই ছ’মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার ২৪.০৬ শতাংশ। ৫৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, সেতু বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের একই দশা। অর্থ খরচ করতে পারছে না স্বাস্থ্যসেবা খাত।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপি আকার হলো দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর পাঁচ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৪৪ হাজার ৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর এবার ব্যয় হয়েছে ৫৬ হাজার ৯৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এডিপির অগ্রগতি ছিল ২৭.০২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৭.৪৫ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬.৫৯ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছর ২৩.৮৯ শতাংশ। তবে বাস্তবায়ন হার গত ডিসেম্বরে ৫.৪৫ শতাংশ। যেখানে আগের বছর একই সময়ে এই বাস্তবায়ন হার ৫.৯৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে আগের বছরের তুলনায় বাস্তবায়ন হার কমেছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলোর খরচের হিসাব থেকে জানা যায়, চলতি এডিপিতে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। এই খাতে এডিপিতে বরাদ্দ ১৩ হাজার কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রথম দু’মাসে খরচ করতে পেয়েছে মাত্র ১৭০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১.৩১ শতাংশ। ৪৬ প্রকল্পের বিপরীতে অর্থবছরের পাঁচ মাসে অগ্রগতি ৬.৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ এত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিপরীতে তাদের অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮৩৬ কোটি ২৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এখন ছ’মাসে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের বরাদ্দ রয়েছে দুই হাজার ৫৫৮ কোটি তিন লাখ টাকা। একই সময়ে তারা ব্যয় করেছে ২২.১১ শতাংশ বা ৫৬৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পাঁচ মাসে ১৪ প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৪৭১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ১৮.৪৪ শতাংশ। অন্য দিকে শীর্ষ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫ মন্ত্রণালয় বিভাগের মধ্যে ২১৪টি প্রকল্পের বিপরীতে শীর্ষে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য থোক বরাদ্দসহ রয়েছে ৩৩ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। তারা ব্যয় করেছে মাত্র ২৬.৮২ শতাংশ বা ৯ হাজার ৯১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতের ৭৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এ বছর বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর খরচ হয়েছে মাসে ছয় হাজার ৪৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ২৩.০৫ শতাংশ।
দেশের সড়ক উন্নয়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১৮২টি প্রকল্পের জন্য ২৮ হাজার ৪১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে সাত হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ২৮.৩৬ শতাশ। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ২১ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা; কিন্তু গত ছয় মাসে তারা খরচ করেছে চার হাজার ৮১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ২৩.৩৪ শতাংশ । পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের মতো বড় প্রকল্পসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৩৬ প্রকল্পের বিপরীতে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ। খরচ করেছে তিন হাজার ৬০২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা ২৬.৫৭ শতাংশ। পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ সেতু বিভাগের ৯ প্রকল্পের বিপরীতে চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ৯ হাজার ৯১৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বাস্তবে গত ছয় মাসে বাস্তবায়নের বিপরীতে খরচ হয়েছে এক হাজার ৭৫২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ১৭.৬৮ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ ও বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে, সেতু বিভাগ (১৭.৬৮শতাংশ), নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় (১১.৫২শতাংশ), ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় (১৫.৫২ শতাংশ), পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ (১.৬১ শতাংশ), সুরক্ষাসেবা বিভাগ (৪.৬৭ শতাংশ), বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (৫.৩১ শতাংশ), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।