৬ বছরেও মামলার তদন্ত শেষ করতে ব্যর্থ দুদক
বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর করা একটি মামলার তদন্তকাজ দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ‘ব্যর্থ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
মামলার আসামি বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর জামিনের বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট এ মন্তব্য করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর রায়টি প্রকাশ হয়।
২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। তাতে বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে বেআইনিভাবে ৪৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার প্রধান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী।
আদালত রায়ে আরো বলেছেন, এই মামলায় ২০১৫ সালে এজাহার হয়। প্রায় ছয় বছর পার হতে চললেও কমিশন মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে ব্যর্থ। আদালত আরো বলেন, কমিশন মামলার তদন্তে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিংয়ের (এপিজি) নির্দেশনা অনুসরণ করছে বলে দাবি করছে। হলফনামাদৃষ্টে আরো মনে হয়, আত্মসাৎকৃত টাকার গতিপথ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের পক্ষে মামলার তদন্তও সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। আদালত ক্ষোভ, হতাশা ও দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছেন, কমিশনের এহেন বক্তব্য আদালতের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে।
আদালতের মতে, এই মামলায় তদন্তের মূল বিষয় হওয়া উচিত ছিল সরকারি কর্মচারী হিসেবে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘটিত হয়েছে কি না তা দেখা। আত্মসাৎকৃত অর্থের গতিপথ শনাক্ত করা অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক শর্ত হতে পারে না। মামলাটি অর্থপাচারের অধীনেও নয়। দণ্ডবিধির ৪০৫ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তরা তাদের নিকট জিম্মাকৃত কিংবা অধীনে থাকা অর্থের ক্ষেত্রে বিশ্বাসভঙ্গ করেছে কি না, এটাই মুখ্য।
এর আগে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অন্তত ৫৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি মামলা ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা হয়। যার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি দুদক। ফলে এ মামলার আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
পরে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলার আসামির জামিন বিষয়ে রায় দেন। ওই মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে আদালত তাদের পর্যবেক্ষণ দেন।
মামলাটিতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো: সগির হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: খুরশীদ আলম খান।