হাফতারের বিরুদ্ধে এরদোগানের লড়াই
লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করার জন্য তুরস্ক প্রস্তুত। লিবিয়া ও তুরস্ক চুক্তি করেছে যা মূলত নিরাপত্তাবিষয়ক চুক্তি। গত নভেম্বরে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে’র প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ সাররাজের আঙ্কারা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি তেল ও নিরাপত্তা খাতে দু’টি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি দু’টি ক্ষুব্ধ করেছে গ্রিসকে।
বিভক্ত দ্বীপ সাইপ্রাসের উপকূলে হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান নিয়ে আঙ্কারা ও অ্যাথেন্সের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই চুক্তি করেই ফয়েজ জেনেভা ও মালয়েশিয়া সম্মেলনে গিয়েছিলেন। ভূমধ্যসাগরে নিজের ও লিবিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে এই চুক্তি। লিবিয়ার বৈধ সরকার থেকে ক্ষমতা দখল করার জন্য ‘হাফতার বাহিনী’ অগ্রসরমান। তাই লিবিয়া ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বহুদিন ধরে, বলতে গেলে গাদ্দাফি হত্যার পর থেকেই সেখানে বিভিন্ন দল উপদল যুদ্ধ করছে। চুক্তির কারণে লিবিয়া তুরস্কের কাছ থেকে সেনাকনভয় ও অস্ত্র সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছে। নৌ ও বিমানবাহিনীর সহায়তার জন্যও বিভিন্ন সামরিক উপকরণ চাইবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সামরিক তথ্য ও ইন্টেলিজেন্স সরবরাহ, যা ত্রিপলি সরকারের বলতে গেলে, নেই। গাদ্দাফি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ সিস্টেম ব্যবহার করতেন। কিন্তু তার হত্যার কিছু দিন আগেই সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়। হাফতারও ওই সময় গাদ্দাফিকে ছেড়ে চলে যান। তুরস্ক এই চুক্তির আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আলাপ করে নেয়। পুতিনের প্রসঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কেননা রাশিয়া হাফতারকে সহায়তা করছে।
রাশিয়ার উদ্বেগ সত্ত্বেও লিবিয়ায় সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছে তুরস্ক। লিবিয়া নিয়ে ফ্রান্স ও ইতালি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিরোধ জেনেভাভিত্তিক সংবাদপত্র Tribune de Geneve বড় প্রতিবেদন লিখেছে। ইতালির কলোনিয়ালিজমের বিরুদ্ধে লিবিয়ার জাতীয় বীর ওমর মোখতারের সংগ্রামও আলোচনায় এসেছে। এই বিরোধ যুদ্ধের পর্যায়ে যেতে পারে বলেও পত্রিকা সতর্ক করে দিয়েছে। লিবিয়ার মানবাধিকার প্রবক্তা আবদুল হাফিজ ঘোঘা বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এগিয়ে না এলে লিবিয়ায় শান্তি ফেরানো সম্ভব নয়।’ ফ্রান্স অস্ত্র দিয়ে জেনারেল হাফতারকে সহায়তা করেছে যাতে বিভিন্ন উপদল নিয়ে তিনি জয়ী হন এবং লিবিয়ার প্রশাসন ফ্রান্সের অনূকূলে যায়। এরপর হাফতার বেনগাজি দখল করে নিয়েছেন। ফ্রান্স চায় শাদ, মালি ও নাইজারের ইসলামী উপদলগুলোকে লিবিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া বা শেষ করে ফেলা। এদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে যুদ্ধ করে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিল।
ইতালি লিবিয়ায় বৈধ সরকারের পক্ষ নিয়েছে এবং নতুনভাবে দূতাবাস খুলেছে। ফ্রান্স ২০১৪ সালে সে দেশে দূতাবাস বন্ধ করেছে। এই দুর্যোগের মধ্যে যারা লিবিয়ায় অভিবাসী হতে চায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসের জন্য ইতালি কাজ করছে। বেনগাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রফেসর আবদুল কাদির কাদৌরা বলেছেন, ইতালি পলিটিক্যাল ইসলামকে সাপোর্ট দিচ্ছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন যে, ইতালি ব্রাদারহুডকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।
হাফতার ৭৬ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ। লিবিয়ার ব্যাপারে মিসর খুব উৎসাহী। মিসরীয় একনায়ক সিসি হাফতারকে সহায়তা করছেন। মিসরের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তি থাকায় রুশ নেতা পুতিন কাছাকাছি ঘাঁটি গাড়তে চাচ্ছেন। হাফতার থাকুন বা লিবিয়া বৈধ সরকার থাকুক এটা বড় কথা নয়। তুরস্কের সাথে ভালো নয় মিসরের সম্পর্কও। উভয় দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। তুরস্কও চায় কাছাকাছি স্থানে সামরিক ঘাঁটি গড়তে। এরপর আসে আমিরাত ও সৌদি আরব। এরা হাফতারকে সহায়তা করছে। অন্য দিকে, জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় দেশগুলো লিবিয়া সরকারকে সাপোর্ট দিচ্ছে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল চান আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও কাতারও আসুক।
এরদোগানও বলেছেন, এসব দেশের ওপর লিবিয়ার গণমানুষের আস্থা আছে। লিবিয়ায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধানে জার্মানি ও ইতালি অংশ নিতে চায়। হাফতার বাহিনী গত এপ্রিলে রাজধানী ত্রিপোলি দখলের লক্ষ্যে সামরিক হামলা শুরু করে। এখন তিনি শুরু করেছেন চূড়ান্ত যুদ্ধ। হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এলএনএ ফ্রান্স, রাশিয়া, জর্দান, মিসর এবং আরব আমিরাতসহ আরব দেশগুলোর সমর্থন পাচ্ছে। লিবীয় সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে ইতালি, তুরস্ক আর কাতার। এ দিকে, সুদান ও শাদের তিন হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা হাফতারের পক্ষে লড়াই করছে। এরা একসময় সুদানের বশিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। এসব যোদ্ধা মূলত সুদানের ‘ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট’ বা আল জাবহা আল ইসলামীয়া নামের রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য। ড. হাসান আল তুরাবি ১৯৭৬ সালে এ সংগঠনের গোড়াপত্তন করেন। শুরু থেকেই এই দল সুদানি সরকারে প্রভাব খাটাতে সক্ষম হয় এবং গণমানুষের সমর্থন পায়। লিবিয়ায় অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধ করার পর তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে তুরস্কের আগমনে হাজার হাজার যোদ্ধা কোন দিকে মোড় নেবে বলা যাচ্ছে না। কেননা তুরস্ক সরকার সুদানের এই দলকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। যদি এরা তুর্কি বাহিনীর দলে ভিড়ে যায়- সেটি হবে হাফতারের মৃত্যুর সমতুল্য।
অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে তাকালে দেখা যাবে, মধ্যপ্রাচ্যের ভুল মেরুকরণ ও রাজনৈতিক প্রবাহের ফল হলো, গাদ্দাফিকে হত্যা করা এবং লিবিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া। সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর হাফতারের পক্ষ নিয়ে দেশটাকে শেষ করছে; একই সাথে ফ্রান্সও এদের মদদ দিচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজির সময় ফ্রান্সের বিমানবাহিনী গাদ্দাফির বহরে হামলা চালিয়েছে। বলতে গেলে, একই যুদ্ধ সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলছে। অবস্থা দেখে মনে হয় আমিরাত-সৌদি আরব-মিসর অক্ষ কোনো যুদ্ধেই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে পারবে না। কিন্তু তত দিনে যুদ্ধস্থানগুলো ‘মরুভূমি হয়ে যাবে।’ কে নেবে এর দায়ভার? লিবিয়া-তুরস্ক চুক্তির কারণে কিছু দেশ যেন অস্থির হয়ে গেছে। গ্রিস, সাইপ্রাস, ইসরাইল ও মিসর সাইপ্রাসের আশপাশে ড্রিলিং শুরু করেছে। ইসরাইলি জাহাজকে তুরস্কের নৌবাহিনী সমুদ্র এলাকা থেকে তাড়া করেছে। এ দিকে, ত্রিপোলি সমুদ্রসীমা থেকে হাফতার বাহিনী তুরস্কের নৌজাহাজ জব্দ করে পূর্বাঞ্চলীয় দারনা শহরের কাছে রাস আল হেলাল বন্দরে নিয়ে গেছে।
তুরস্কের সেনাবাহিনীর শত শত কনভয় ত্রিপোলি অভিমুখে রয়েছে। লিবিয়ায় বা ত্রিপোলিতে সিরিয়ার মতো আরো এক বড় যুদ্ধ বাধতে সময় লাগার কথা নয়। হাফতারের গতিরোধ করার জন্য লিবিয়া সরকার সেনা মোতায়েন করেছে। বর্ম ধ্বংস করার উপযোগী, তুর্কি মিসাইল এরই মধ্যে ত্রিপোলিতে পৌঁছে গেছে। তুর্কি সেনারা পৌঁছলে যুদ্ধের গতিবিধি বদলে যাবে। এর আগেই হাফতার মরণকামড় দিতে চান। আমরা দেখেছি, মাত্র সাত দিনের মধ্যে সিরিয়ায় তুর্কি বাহিনী যুদ্ধের গতিবিধি বদলে দিয়েছে, যা কয়েক মাস ধরে চলছিল।
২০১১ সালে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলে তুরস্ক কোনো পক্ষাবলম্বন করেনি। তুর্কি সরকার মনে করে, লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ করা না গেলে এখানেও ইয়েমেনের মতো সাধারণ মানুষ গণহত্যার শিকার হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। তুরস্ক মনে করে, ত্রিপোলিতে একটি তুর্কি সেনাঘাঁটি থাকা দরকার, কাতারের মতো। তুর্কি জাহাজ চলাচল, রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ত্রিপোলিতে তাদের বন্দর থাকাও প্রয়োজন।
এস-৪০০-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছে। একইভাবে, তুরস্কের মানহানিকর, ১০৪ বছরের পুরনো আর্মেনীয়দের গণহত্যার জন্য তুরস্ককে দোষারোপ করে খসড়া বিল পাস করা হয়েছে। তুরস্ক দেখছে যাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একজন পার্টনার মনে করা হয় বাস্তব ক্ষেত্রে সেটা উল্টো। এখন তুরস্ককে নিজেদের বোঝা নিজেই বহন করার যোগ্যতা এবং পররাষ্ট্রনীতিতে নিজের প্রজ্ঞার ছাপ রাখতে হবে। তুরস্ক ভাবছে, এসব অবরোধের পর ন্যাটোর ব্যবহারের ব্যাপারে ইনসারলিক ও কিরিচিক সেনাঘাঁটি বন্ধ করে দেবে কি না। ইনসারলিক ঘাঁটি থেকেই জুলাই ১৫, ২০১৬ সালে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হটানোর ক্যুতে সহায়তা করা হয়েছিল। ফতেহউল্লাহ গুলেনের সংগঠনের সদস্যদের সরকারবিরোধী তথ্যাবলিসহ অনেক কিছু ইনসারলিক বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
গাদ্দাফিকে যারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তারা এবার পরবর্তী যুদ্ধের অধ্যায় শুরু করেছে। এই অধ্যায় পূর্ণ ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সৌদি আরব, মিসর ও আরব আমিরাত; তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স ও রাশিয়া। এরা সবাই জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত ও স্বীকৃত লিবিয়া সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়েছে তেল ও গ্যাসের জন্য। কিন্তু এর দরুণ বিভক্ত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ এবং মরছে মুসলিম যোদ্ধারা। এরা হাফতারের ‘পেছনে লাইন দিয়েছে’। হাফতারকে সিআইএ বহু বছর ধরে পরিপুষ্ট করেছে এই কাজের জন্য। সমালোচকরা বলছেন, সে লিবিয়ার ‘আইএস’। এখন লিবিয়া উপকূল অঞ্চলে হাফতার বাহিনী তৃতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন। অপর দুটি হলো দায়েশ বা আইএস এবং কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে। হাফতার নিয়মিত মিসর চ্যানেল দিয়ে ওই দেশগুলো থেকে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও নগদ অর্থ পেয়ে থাকে। বিনিময়ে দখল করা তেলকূপ থেকে জ্বালানি সরবরাহ করে। এর মধ্যে আমিরাত লিবিয়ায় বিমানবাহিনীর বিমান ও বৈমানিক পাঠিয়েছে। সিরিয়ায় পিকেকে সমর্থিত ওয়াইপিজি যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ পেত, সেভাবে হাফতার লিবিয়ায় হচ্ছে পরিপুষ্ট। ইয়েমেনের পর লিবিয়া হতে পারে আরেকটি মহাশ্মশান। মনে রাখা চাই, সিরিয়ায় তুরস্ক শুধু পিকেকের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়নি, প্রকারান্তরে সৌদি আরব-আমিরাত-মিসর ব্লকের সাথেও যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছে।
লিবিয়ার সাথে তুরস্কের চুক্তি পশ্চিমা ও তুরস্কবিরোধী ব্লকের জন্য এক বড় ধাক্কা। এমন কিছু কেউ ধারণা করেনি। এখন সবাই হকচকিত। সমুদ্রকে সীমান্ত ধরলে তুরস্ক ও লিবিয়া প্রতিবেশী। গ্রিস-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের ভূমধ্যসাগরীয় আঁতাত চুক্তির কারণে নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। সাইপ্রাসকে এখন তুরস্কের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, যা সম্ভব নয়। লিবিয়াতে সেনা পাঠানো আরেক অর্থে তুরস্কের নিরাপত্তা বিধান করা। এটা তুরস্কের জন্য জরুরি। চুক্তির ফলে তুরস্ক লিবিয়ায় সেনা পাঠাতো, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা করতে পারবে। তুর্কি বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, পশ্চিমারা চেয়েছে তুরস্ককে আনাতোলিয়ার সমস্যার মধ্যে ধরে রাখতে লিবিয়ায় স্বাধীনভাবে পদচারণায় তাদের সে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
কয়েক দিনেই লিবিয়ায় ত্রিপোলি ফ্রন্টে সঙ্ঘাত তীব্রতর হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় এই সঙ্ঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে। হাফতার বিদেশী সহায়তায় ত্রিপোলিতে বোমাবর্ষণ করেছেন। তিনি ত্রিপোলি দখল করতে মরিয়া। তুরস্কের পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু হলে সংশ্লিষ্ট আইনটি ৮-৯ জানুয়ারির মধ্যে পাস হবে। তবে হাফতার এভাবে হামলা চালালে এরদোগান বিশেষ ক্ষমতায় এর আগেই সেনা পাঠাবেন। এখন একটিই সমস্যা; যদি আমেরিকা অংশগ্রহণ করে তবে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হবে। তখন এই খেলা সহজে আর শেষ হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিবিয়া-তুরস্ক চুক্তিকে বলেছেন ‘উসকানিমূলক’। ইসরাইল ও আরব মিত্রদের অনুরোধ ট্রাম্প কতটুকু উপেক্ষা করবেন তা বলা যাচ্ছে না। এখন লিবিয়ার জন্য এই সঙ্কট কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; এটা আঞ্চলিক সঙ্কট, ইতিহাস ও ভবিষ্যতের বিষয়। এই মুহূর্তে দরকার তুরস্ক ও লিবিয়ার নিরাপত্তা এবং ভূমধ্যসাগরে চলাচলের নিশ্চয়তা। সমালোচকরা আরো দেখছেন, যদি তুরস্ক সামরিক বাহু বিস্তৃত না করে তবে তুরস্কের অভ্যন্তরে নানা সমস্যা ও যুদ্ধাবস্থার মোকাবেলা করতেই সময় ফুরিয়ে যাবে। শত বছর আগে তুরস্কের ভাগ্যে এমনই হয়েছিল। তাই তুরস্ক এখন সজাগ।
তুরস্কের সেনাবাহিনী লিবিয়ার মাটিতে পা রাখার সাথে সাথেই ভূ-রাজনীতিতে অর্থবহ পরিবর্তন আসবে। মনে রাখতে হবে, আমিরাত আসলে তুরস্কের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশ। এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারাই একসময় মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন। যা হোক, কয়েক দিনের মধ্যেই ত্রিপোলির যুদ্ধ পরিস্থিতি বলে দেবে, কার গন্তব্য কোথায়।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার