হুমকির মুখে আফগান সরকার, বাড়বে সহিংসতা

0

দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। সীমান্তের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সম্পদের ঘাটতি নিয়ে সংঘাত, চরমপন্থি সহিংসতার হুমকি থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যন্ত নানা ইস্যুতে ২০১৯ সালে সারাবছরই জর্জরিত ছিল অঞ্চলটি। কিন্তু গত বছর সব ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লের নজর কেড়েছে দুটি সংকট। এক, আফগানিস্তানে তীব্র যুদ্ধ ও দুই, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা। ২০১৯ সালে এই সংকট দুটির অবস্থা যতই নাজুক থাকুক না কেন, চলতি বছর তা আরো বেগতিক রূপ ধারণ করবে।
গত ১২ মাসে নানা চড়াই-উতরাই পার করেছে আফগানিস্তান। দেশটিতে তালেবানদের তৎপরতা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রে রেকর্ড পরিমাণ মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য হামলা ও সংঘর্ষে। ২০১৪ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সেখানে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর ছিল এটি।

উপহাসের বিষয় হচ্ছে, দেশটিতে এমন এক সময়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন সেখানে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা জোরদার হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিতে আগ্রহী। গত থ্যাংকস গিভিংয়ে আকস্মিকভাবে আফগানিস্তান সফর করেন তিনি। তখন মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বলেন, তালেবানরাও শান্তিচুক্তি চায়। তালেবানরা তার এ দাবি অস্বীকার করেছে। অবশ্য, এর কয়েক মাস আগে দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ভেস্তে যায়। আফগানিস্তানে তালেবান হামলায় এক মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর চুক্তি থেকে সরে আসেন ট্রাম্প। কিন্তু তার থ্যাংকসগিভিং সফর শেষেও তালেবান হামলায় মার্কিন সেনারা প্রাণ হারিয়েছে। গত বছর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তালেবানের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তিতে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল দুই পক্ষ। অবশ্য চুক্তি ভেস্তে গেলেও অল্প সংখ্যক সেনাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প।

আমেরিকানদের জন্য খুশির খবর হচ্ছে যে, চলতি বছরও তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় পক্ষই সেখান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার দেখতে উদগ্রীব। ট্রাম্পের জন্য আগামী নির্বাচনে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে এই প্রত্যাহার বেশ কাজে আসবে। গত মাসে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, জ্যেষ্ঠ মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, আফগানিস্তানে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। এতে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার ট্রাম্পের জন্য আরো গুরুতর হয়ে উঠেছে। কিন্তু তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি আফগানিস্তানে সহিংসতা কমাতে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখবে না। অন্য কথায়, আফগানিস্তানে যুদ্ধ জারি থাকবে।

মার্কিন-তালেবান চুক্তি আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দেবে। তবে সে আলোচনার পথ প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ। আফগানিস্তানের সর্বশেষ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি। কিন্তু তার জয়ের ব্যবধান খুবই অল্প। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে সরকার গঠন হওয়ার সম্ভাবনা কম। গণির প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনের ফলাফল চুপচাপ মেনে নেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গণির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর যদি চূড়ান্ত ফলাফলে গণি ৫০ শতাংশেরও কম ভোট পান তাহলে দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু তীব্র ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সে ভোট গ্রহণ কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। এরকম হলে তালেবানের সঙ্গে সরকারের শান্তি আলোচনা পিছিয়ে পড়বে দীর্ঘ সময়। আর আলোচনা শুরু হলেও তালেবান অস্ত্র জমা দিয়ে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সব মিলিয়ে, আফগানিস্তান থেকে চলতি বছর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনটা হলে আফগান সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের শক্তি পাবে তালেবান। বাড়বে সহিংসতা।

(মার্কিন সাময়িকী ফরেইন পলিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে। মূল প্রতিবেদনটি লিখেছেন ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উডরো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্স এর এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক মাইক্যাল কুগেলম্যান। আজ প্রকাশিত হলো এর প্রথম পর্ব)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com