ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে: বিআইডিএস
রাজধানী ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে। আর ৬৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলন-২০২০-এর সমাপনী অধিবেশনে সোমবার এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষণাটির প্রধান গবেষক জুলফিকার আলী।
গবেষণায় বলা হয়, রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আয়ের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ধনী-গরিবের আয়ের এই বিপুল বৈষম্য প্রভাব ফেলছে রাজধানীবাসীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর। ঢাকা শহরের মানুষের মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ।
‘অ্যাটমোসফেয়ারিক পার্টিকুলেট ম্যাটার অ্যান্ড ব্ল্যাক কার্বন ইন ঢাকা সিটি এ কন্ট্রিবিউটর টু ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় বছরে যেসব মানুষ মারা যায় তার মধ্যে বায়ুদূষণজনিত অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে শ্বাসকষ্টে মারা যায় ৮ শতাংশ, কিডনি রোগে ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ফুসফুস রোগে মারা যাচ্ছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ।
আরও বলা হয়, ঢাকার বর্তমানে বায়ুতে ব্ল্যাক কার্বনের উপস্থিতি রয়েছে ৬৫ মাইক্রো গ্রাম কিউবিক মিটার। কিন্তু সহনীয় মাত্রার এ কার্বন থাকা প্রয়োজন ২৫ মাইক্রো গ্রাম কিউবিক মিটার। বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু থেকে প্রায় ২২ মাসের বেশি কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে কমেছে প্রায় ২০ মাস।বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানসহ দেশের অর্থনীতিতে ৬ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সরকারি বিনিয়োগ কিছুটা হলেও বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে স্থবির।
এ ছাড়া অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- বৈষম্য বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি না হওয়া, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাকে কাজে লাগানো এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এখন থেকেই সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা জরুরি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের শেষ দিনের আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সম্মেলনের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকায় মাসিক মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষের হাতে মোট আয়ের ৪১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
আর সর্বনিম্নে থাকা ১০ শতাংশের মাথাপিছু আয় মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। ফলে আয়বৈষম্য বাড়ছে। অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে রাজধানীর বাতাসে অতিমাত্রার ব্ল্যাক কার্বনের কারণে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল কমছে। সেই সঙ্গে মোট মৃত্যুর একটি বড় অংশই হচ্ছে এ সম্পর্কিত রোগের কারণে।
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন আইএলওর সাবেক স্পেশাল অ্যাডভাইজার ড. রিজওয়ানুল ইসলাম, পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
সম্মেলনে ‘এ গ্লামপেস টু লিভস অব দ্য পিপল ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষের মাসিক মাথাপিছু আয় মোট আয়ের ৪১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া সর্বনিু ১০ শতাংশ মানুষের আয় মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। সর্বনিু ৫০ শতাংশ মানুষের আয় ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর আরবান স্ট্র্যাটেজির চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে বায়ুদূষণ, বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি, রাস্তার খারাপ অবস্থা, লোডশেডিং, ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহ না থাকা, নিরাপত্তা এবং ইভটিজিং।
বলা হয় গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় এসেছে কিশোরগঞ্জ থেকে। এরপর রয়েছে বরিশাল, ময়মনসিংহ, ভোলা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, রংপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং সবচেয়ে কম মানুষ এসেছে টাঙ্গাইল থেকে। এ ছাড়া গত ১০ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় এসেছে বরিশাল থেকে। এরপর রয়েছে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ভোলা এবং সবচেয়ে কম মানুষ এসেছে শরীয়তপুর থেকে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.