সালাম কেন গুরুত্বপূর্ণ

0

দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করতে মহানবী (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, সালাম হলো মানুষের জন্য শান্তির প্রত্যাশা করা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া। শুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া স্বতন্ত্র এক ইবাদত। অশুদ্ধ উচ্চারণে সালামের রীতি ইসলামে অপছন্দনীয়।

আল্লাহর সালাম

একবার জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ খাদিজা (রা.)-এর কাছে সালাম পাঠিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার জিবরাইল রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, এই যে খাদিজা আসছে। তার হাতের পেয়ালায় পানীয় বা খাবার আছে। তাকে বলবেন, আল্লাহ তাকে সালাম জানিয়েছেন এবং আমিও। এবং সুসংবাদ দেবেন জান্নাতে এমন এক ঘরের যা হবে হীরে-মোতির ও কোলাহলমুক্ত।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮২০)

জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহর কথোপকথন শুরু হবে সালামের মধ্য দিয়ে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যেদিন তারা আল্লাহর সঙ্গে দেখা করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে সালাম।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৪)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৫৮)

জিবরাইল (আ.)-ও আয়েশা (রা.)-কে সালাম দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘একবার রাসুল (সা.) বললেন, জিবরাইল (আ.) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২১৭)

ফেরেশতাদের সালাম

আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে কয়জন ফেরেশতা তার পুত্রসন্তান ইসহাকের জন্ম সুসংবাদ নিয়ে এসে তাকে সালাম দিয়েছেন। কোরআন বলছে, ‘ফেরেশতারা সুসংবাদসহ ইবরাহিমের কাছে এলো। তারা বলল, সালাম। তিনিও বললেন, সালাম।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬৯)

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ফেরেশতারা সালামের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন- ‘যখন তারা জান্নাতের কাছাকাছি যাবে ও জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৭৩)

প্রথম মানুষের প্রথম বাক্য

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাতায়ালা আদমকে সৃষ্টি করলেন, তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাতায়ালা তাকে বলেন, যাও, বসে থাকা ফেরেশতা দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম-অভিবাদন। আদম (আ.) গিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম (আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতারা জবাব দিলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ (আপনার প্রতিও শান্তি ও আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক)। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৯৮৭)

সালাম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার পাশাপাশি নেকির পাল্লাকেও সমৃদ্ধ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলবে তার জন্য ১০টি নেকি লেখা হবে, যে ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হবে এবং যে ‘আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বলবে তার জন্য ৩০টি নেকি লেখা হবে।” (সহিহুত তারগিব : ৩/২০)

রাসুল (সা.) সালামকে মুসলমানের অন্যতম সেরা আমল বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে এক সাহাবি প্রশ্ন করেন, ইসলামে শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে আর তোমার পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১২)

পরিচিত কাউকে সালাম দিলে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়, বাড়ে হৃদ্যতা। অপরিচিত কাউকে সালাম দিলে সূচিত হতে পারে গভীর আন্তরিকতা। পরিচিত হোক বা অপরিচিত সাক্ষাতের-কথাবার্তার শুরু যখন সালামের মাধ্যমে হয় তখন অনাবিল শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করে চারপাশে। সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। ভালোবাসার এ বন্ধন সমাজ জীবনকে যেমন সজীব করে, পরকালীন মুক্তিও আছে এর সঙ্গে জড়িয়ে।

সালামের আদেশ

সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন মদিনায় এলেন, তখন দলে দলে মানুষ তার দিকে ছুটল। আর বলতে লাগল, রাসুল (সা.) এসেছেন; রাসুল (সা.) এসেছেন। তাকে দেখার জন্য ভিড়ের ভেতরে আমিও গেলাম। আমি তাকে দেখেই চিনতে পারলাম এবং বুঝতে পারলাম- এ চেহারা কোনো মিথ্যুকের হতে পারে না। সেদিন তিনি এভাবে ভাষণ আরম্ভ করেন, ‘হে মানুষেরা! তোমরা সালামের বিস্তার ঘটাও, মানুষকে খাবার খাওয়াও এবং যখন অন্য মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা শান্তিতে ও নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)

মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসে রাসুল (সা.) মানুষদের প্রথম উপদেশ দিয়েছেন তোমরা সালামের অধিক প্রচলন করো।

এছাড়াও হাদিসে রাসুল (সা.) সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেনÑ ১. রোগীর খোঁজখবর নেওয়া ২. জানাজার সঙ্গে যাওয়া ৩. হাঁচিদাতার জন্য দোয়া করা ৪. দুর্বলকে সাহায্য করা ৫. নির্যাতিতকে সাহায্য করা ৬. সালাম প্রসার করা ৭. এবং প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩৫)

ঘরে প্রবেশের সময়

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করো তখন ঘরের লোকদের সালাম দাও। এ কাজ আল্লাহর কাছে পবিত্র ও কল্যাণময়।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৬১)

আনাস (রা.) বলেন রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাও, তখন সালাম দিয়ো। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস ২৬৯৮)

অন্যের ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দিয়ে অনুমতি চাওয়া ইসলামের বিধান। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অন্যের ঘরে তাদের অনুমতি ও সালাম ব্যতিরেকে প্রবেশ করো না। আর যদি ঘরে কেউ না থাকে বা প্রবেশের অনুমতি না দেয় অথবা তোমাদের ফিরে যেতে বলে তাহলে ফিরে যাও। এই তোমাদের জন্য উত্তম।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৮)

তবে পিতা-মাতার জন্য সন্তানের ঘরে প্রবেশে অনুমতির প্রয়োজন নেই।

মজলিস বা সাক্ষাতের শুরু-শেষে সালাম দেওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোনো মজলিসে গেলে সালাম দেবে। যখন মজলিস ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেবে তখনো সালাম দেবে। প্রথম সালামের চেয়ে দ্বিতীয় সালামের গুরুত্ব মোটেও কম নয়।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০১৮)

সালামের জবাব

সালাম দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আবার কেউ সালাম দিলে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হয়, তখন তোমরা এর চেয়ে উত্তম পন্থায় সালামের উত্তর দাও কিংবা (অন্তত) ততটুকুই বলে দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৮৬)

সালামের মাধ্যমে আমাদের আখেরাতের পুঁজি সমৃদ্ধ হবে। এবং পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবন হবে শান্তি ও সম্প্রীতির।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com