নারীরা ভয়ঙ্কর পাইলস সম্পর্কে কতটা সচেতন?

0

পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ, যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। এটি অস্বস্তিকর এবং অসহনীয় একটি সমস্যা। আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা পাইলসের সমস্যায় ভোগেন। পাইলসের রোগী সাধারণত ব্যথায় ভোগেন বেশি। পুরুষরা এই বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেও নারীরা সব সময় লুকিয়ে রাখেন, যার জন্য তারা বেশি সমস্যার ভোগে।

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পাইলস হতে পারে। আবার অতিরিক্ত স্থূলতাও হতে পারে পাইলসের কারণ। বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীরা সাধারণত পাইলসে ভোগেন বেশি।

পায়ুপথের এসব সমস্যা বেশিরভাগ নারী লুকিয়ে রাখেন বা এ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত হন, যা ডেকে নিয়ে আসতে পারে নানা সমস্যা।

কখনো বারবার পাতলা পায়খানা হওয়ার ফলেও পায়ুপথের সমস্যা হতে পারে। মলত্যাগের পর ব্যবহৃত টয়লেট পেপারে রক্তের ছোপ পাইলসের লক্ষণ হতে পারে। কখনো কখনো নরম গোটা পায়ুপথে বেরিয়ে আসতে পারে। শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থও বেরোতে পারে।

পায়ুপথের ভেতরের অংশ চিরে যাওয়াকে ‘ফিসার’ বলা হয়। এমন হলে মলত্যাগের সময় ব্যথা লাগতে পারে। কিন্তু, এগুলোর চিকিৎসা সহজ। সব সময় যে অস্ত্রোপচার লাগবে, তাও নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ আরো সহজ।

আসুন জেনে নেই পাইলস কেন হয়, এর প্রতিকারই বা কি?

এর সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

১. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।

২. শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।

৩. শরীরের অতিরিক্ত ওজন।

৪. গর্ভাবস্থা।

৫. লিভার সিরোসিস।

৬. মল ত্যাগে বেশি চাপ দেয়া।

৭. অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ) ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা।

৮. টয়লেটে বেশি সময় ব্যয় করা।

৯. বৃদ্ধ বয়স।

১০. পরিবারে কারো পাইলস থাকা।

১১. পায়ুপথে যৌন মিলনে অভ্যস্ততা।

১২. গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অনেকের পাইলস রোগটি দেখা দেয়। শিশুর গ্রোথের সঙ্গে মলদ্বারে চাপ পড়লে নারীর পাইলস হতে পারে।

১৩. ফ্যাটি ও হাই প্লোটিনযুক্ত খাবার যেমন: গরুর মাংস, চিজ, মাখন, ফ্রাইড, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি বেশি খেলে পাইলস হতে পারে।

১৪. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি।

পাইলসের লক্ষণসমূহ: মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে

১. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া।

২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, নাও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনো কখনো এমনো হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে।

৩. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া।

৪. কোনো কোনো ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে

১. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।

২. কখনো কখনো রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।

পাইলস রোগে করণীয়

১. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা

২. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা

৩. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা

৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো

৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

৬. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা

৭. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা

৮. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ বেশি গ্রহণ না করা

৯. মল ত্যাগে বেশি চাপ না দেওয়া

১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।

কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।

ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন; ভিজিয়ে না রেখে পানিতে ভুসি মেশানোর পরপরই খেয়ে নিন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে বাথরুমে যেতে দেরি করা ঠিক নয়; যত দেরি করবেন, অন্ত্রের ভেতর থাকা মল থেকে পানি শোষিত হয়ে মল আরও শক্ত হয়ে যাবে।

পায়খানা নরম রাখার সিরাপ, খাওয়ার অন্যান্য ওষুধ, পায়ুপথে ব্যবহারের ওষুধ বা গরম পানিতে বসার মতো সহজ চিকিৎসার মাধ্যমেও আপনি সুস্থ হতে পারেন।

একটি বোল বা বাথটাবে কুসুম গরম পানি নিয়ে দিনে তিনবার অথবা প্রতিবার পায়খানার পর ১৫-২০ মিনিট করে কুসুম গরম পানিতে বসলে পায়ুপথের যন্ত্রণা অনেকটাই কমে। পানিতে বসার পর ভেজা অংশ হালকাভাবে মুছে নিতে হয়।

চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা করে কিছু জটিল ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্তও নিতে পারেন। তবে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারও তেমন জটিল নয়। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসা নিন। অবহেলা করবেন না। অস্বস্তি করবেন না। মনে রাখবেন, যেকোনো সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করানো সহজ, জটিলতার আশঙ্কাও কম।[১]

পাইলস কি কোনো গোপন রোগ

কবির, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তারপরও তার যত আক্ষেপ ও অনুশোচনা। মনে হয় কোনো পাপ করেছি।

নইলে আজ এভাবে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম কেন? কি সেই অনুশোচনা? কি সেই পাপ? আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনও পাইলস হওয়াকে একটি গোপন রোগ হিসেবে মনে করেন।

কেউ কেউ বলেন, এটি কি কাউকে বলা যায়? আমার স্ত্রীও জানে না যে আমার পাইলস হয়েছে। মূল সমস্যা হল চিকিৎসকের কাছে এসে পাইলসের গোপন স্থানটি দেখাতে হবে এখানেই যত সমস্যা। অনেকেই এটিকে অশ্লীলতা হিসেবে ভাবেন। কারও হার্টে কোনো অসুবিধা হলে বা টনসিলে ব্যথা হলে যে কারও সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেন অথচ পাইলসের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উল্টো।

আধুনিক এক যুবকের কথা বলছি। চেম্বারে ঢুকে প্রথমে তার সঙ্গী সবাইকে বাইরে যেতে বললেন তারপর স্ত্রীকেও। এরপর রুমে আমি এবং সেই যুবক রোগী। আমাকে অনুরোধ করলেন চেম্বারের পর্দাঘেরা অংশে যেতে। আমিও কিছু বারণ করছি না।

ভাবছি হয়ত তার গোপন কোনো রোগ বা যৌনরোগ আছে। আশ্চর্য হলাম তখন যখন রোগীটি খুবই বিব্রতভাবে আমাকে বললেন যে, স্যার আমার মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায়। আমি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি। আমার স্ত্রীকেও জানাতে চাই না। দয়া করে আমাকে একটু চিকিৎসা দিন।

অন্য একজন রোগীর বয়স ৬০। হাউজিংয়ের অফিসার ছিলেন। বহু বছর পূর্বে ঢাকা শহরে এক হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে মলদ্বারে ইনজেকশন নিয়েছেন। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন যে, মলদ্বারে নাইট্রিক এসিড ইনজেকশন দেয়া হয়েছে।

ঐ ইনজেকশন দেয়ার পর মলদ্বারের আশপাশে মাংস পঁচে গিয়ে মলদ্বার এমনই সরু হয়েছে যে তিনি আর মলত্যাগ করতে পারেন না। সামান্য ছিদ্র দিয়ে সব সময় পায়খানা চুইয়ে পড়ে। ভিতরে সর্বদা তুলার প্যাড পরে থাকেন। তাকে বললাম যে, দেশে আইন রয়েছে, শরীরে এসিড দিলে তার সাজা হয় আপনি বিচার চান।

রোগীর উত্তর ছিল এরূপ, ‘স্যার বয়স হয়েছে মেয়ে জামাই আছে, নাতি আছে, সমাজে এটি জানাজানি হয়ে গেলে মুখ দেখাতে পারব না। তাই এ ঘটনা প্রকাশ করতে চাই না। আপনি দেখুন কিছু করতে পারেন কিনা’।

এ কারণে আমাদের দেশে পাইলসের হাতুড়ে চিকিৎসার এত প্রসার। প্রতিদিন মলদ্বারে হাতুড়ে অপচিকিৎসার জটিলতা নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন যে, অপচিকিৎসায় তার মলদ্বার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তখন লোকলজ্জার ভয়ে এবং নিজের বোকামীর কথা ভেবে কেউই হাতুড়ে ডাক্তারের বিচার চাইতে চান না।

সবারই একই কথা হাতুড়ে চিকিৎসার কুফল আমাদের জানা ছিল না এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার কারণে কেউই নিজের দুরবস্থার কথা পর্যন্ত প্রচার করতে চান না।

অনেকেই বলেন যে, স্যার আমার পাইলস অপারেশন হয়েছে শুনে সহকর্মীদের অনেকেই বলল যে, তারও বহুদিন যাবৎ এ সমস্যা আছে কিন্তু কাউকে দেখাননি। এ সব সহকর্মী আগে কখনও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।

অনেক রোগী বিশেষত মহিলা রোগীরা বছরের পর বছর ভোগেন কিন্তু কাউকে দেখান না। শেষ পর্যন্ত যখন বয়স বেড়ে যায় ৬০-৭০ হয় তখন আর সহ্য করতে পারেন না। শরীরে অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি হয়েছে তখন ছেলে বা নাতি-পুতিদের নিয়ে আসেন এবং বলেন যে, দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ উনি কাউকে দেখাবেন না বলে জেদ ধরেছিলেন, এখন আর সহ্য করতে পারছেন না। এই ভোগান্তির মূল কারণ কুসংস্কার।

দেশের একজন নামকরা উপাচার্যের স্ত্রীর পাইলস হয়েছে বহু বছর যাবৎ। কিন্তু তিনি ডাক্তারকে দেখাবেন না। শেষে এমন অবস্থা যে পায়খানা না করলেও রক্ত যায়। তার কয়েক ছেলে-মেয়ে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার। শেষ পর্যন্ত তাকে দেখলাম এবং বললাম যে, বিনা অপারেশনে তিনি ভালো হবেন।

কিন্তু রোগী বিশ্বাস করলেন না। অতঃপর দু’বার তার রিংলাইগেশন পদ্ধতিতে বিনা অপারেশনে পাইলস চিকিৎসা করায় তিনি সম্পূর্ণ ভালো হন। এরপর তিনি মন্তব্য করলেন যে, ভেবেছিলাম পাইলস নিয়েই কবরে যাব এখন দেখলাম এত সহজে ভালো হওয়া যায়। কেন যে অযথা এত ভুগলাম।

মলদ্বারের প্রতিটি রোগ বিজ্ঞানসম্মত এবং এর প্রতিটি রোগই চিকিৎসায় সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। বিশেষ করে পাইলস ৯০% বিনা অপারেশনে ভালো করা যায়।[২]

পাইলস উপশমের ঘরোয়া উপায়

হেমোরয়েড হলো রক্তনালী, কানেক্টিভ টিস্যু ও মাংসপেশী দিয়ে তৈরি কুশন, যার অবস্থান অ্যানাল ক্যানালে। সাধারণত মলত্যাগের সময় রেক্টামে অত্যধিক বল প্রয়োগের ফলে হেমোরয়েড ফুলে যায়- দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা, অত্যধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা অতিরিক্ত ভার বহনের ফলেও হেমোরয়েড সমস্যা হতে পারে। হেমোরয়েড সমস্যা থেকেই পাইলস (অর্শরোগ) সৃষ্টি হয়।

হেমোরয়েড ফুলে গেলে অবশ্যই ব্যথা হবে এমন কোনো কথা নেই, তবে রক্তক্ষরণ, ফোলা ও অস্বস্তি হতে পারে। এখানে হেমোরয়েড বা পাইলস সমস্যা উপশমের জন্য কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আলোচনা করা হলো।

আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান: কিভাবে পাইলসের চিকিৎসা করবেন? শরীরের ভেতর থেকে নিরাময়ের জন্য উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শুরু করুন, যা পাইলস জনিত রক্তপাত ও ব্যথা হ্রাস করতে পারে। পাইলস উপশমের জন্য আপনার প্লেটে আঁশ সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি, বাদামী চালের ভাত, হোল গ্রেন ও বাদাম রাখুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে।

টি ব্যাগ ব্যবহার করুন: গরম, ভেজা টি ব্যাগ প্রয়োগের মাধ্যমে বাহ্যিক পাইলস উপশম হতে পারে। চায়ের ট্যানিক অ্যাসিড ফোলা হ্রাসে সাহায্য করবে, ব্যথা কমাবে এবং রক্তক্ষরণ থামাতে রক্ত জমাটবদ্ধতা বৃদ্ধি করবে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না: যদি আপনার ডেস্ক জব থাকে, তাহলে পাইলস সৃষ্টিকারী রেক্টাল প্রেশার দূর করতে প্রতিঘন্টায় অন্তত পাঁচ মিনিট আশপাশে হাঁটুন। জিমে স্টেশনারি বাইক ও স্কোয়াট পরিহার করুন, যাদের উভয়টাই অনুরূপ প্রেশার প্রয়োগ করতে পারে। এর পরিবর্তে, অন্ত্রের কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন।

গরম পানিতে ভেজান: গরম পানি স্ফীত শিরা সংকুচিত করতে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে পারে। সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে আপনার বাথটাব অথবা সিটজ বাথকে চার বা পাঁচ ইঞ্চি উষ্ণ পানিতে পূর্ণ করুন। এবার বসে পাইলস আক্রান্ত স্থানে উষ্ণ পানির ছোঁয়া লাগান। গরম পানিতে বসার পূর্বে টাবে এক মুঠো এপসম সল্ট মেশাতে পারেন, যা পাইলসকে আরো বেশি প্রশমিত করবে।

বরফ ব্যবহার করুন: পাইলসে রক্তনালী ফুলে যায়, কিন্তু বরফ তাদেরকে সংকুচিত করতে পারে এবং পাইলস থেকে বড় ধরনের মুক্তি দেয়। একটি ব্যাগ বরফ দিয়ে পূর্ণ করুন, এটিকে পাতলা কাপড়ে মোড়ান এবং এটির ওপর ২০ মিনিট বসুন। প্রয়োজনে পুনরাবৃত্তি করুন, কিন্তু পুনরায় বসার পূর্বে অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন অর্থাৎ দুই বসার মাঝখানে অন্তত ১০ মিনিটের বিরতি থাকবে।

এটি পরিষ্কার করুন: প্রতিদিন গোসলের সময় উষ্ণ পানিতে আপনার মলদ্বার অঞ্চল ভেজান। সাবান অথবা অ্যালকোহল-বেসড বা পারফিউমড ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না, যা পাইলসকে আরো খারাপ করতে পারে। চিন্তা করার কিছু নেই, শুধু উষ্ণ পানিই আপনার মলদ্বার অঞ্চল পরিষ্কার করতে পারবে। টাব থেকে ওঠে আসার পর মলদ্বার অঞ্চল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করুন।

শুয়ে থাকুন: জেল অথবা ক্রিম ছাড়া কিভাবে পাইলসের চিকিৎসা করবেন? খুব সাধারণ একটি উপায়ে আপনি তা করতে পারেন। সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে পা দুটিকে ওপরের দিকে আধা ঘন্টা রাখুন। এতে ব্যাকসাইডে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং পাইলস উপশম হবে।

সাধারণ টয়লেট পেপার ব্যবহার করুন: সুগন্ধযুক্ত অথবা রঙিন টিস্যু পেপারে অতিরিক্ত কেমিক্যাল থাকে যা আপনার স্পর্শকাতর অঞ্চলে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। পরিষ্কারের প্রয়োজনে অল্প ভেজা সাধারণ, সাদা ও সেন্টমুক্ত টয়েলট পেপার বা টাওয়েলেট ব্যবহার করুন। এরপর ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে সেন্টমুক্ত ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন।

পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করুন: আপনি ভ্যাসলিন দিয়েও পাইলসের চিকিৎসা করতে পারেন। আক্রান্ত স্থানে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।

প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমে যান: প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া না দিয়ে মল ধরে রাখার ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এটি আপনার পেটে চাপ সৃষ্টি করবে এবং পাইলসের অবস্থা আরো খারাপ করবে। তাই প্রাকৃতিক ডাক আসলে দেরি না করে বাথরুমে যান।

আলু প্রয়োগ করুন: এটি অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু আলু পাইলস উপশম করতে পারে এটাই সত্য। আলুকে পিষে অথবা টুকরো করে কেটে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। কাটা আলু উপশমকারক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে।

[৩] [১] অনলাইন ডেস্ক [২] অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক, মলদ্বার ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, ইন্টারন্যাশনাল স্কলার, ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা [৩] রিডার্স ডাইজেস্ট

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com