পরিবারে করোনার হানা? আপনার জন্য ৭ পরামর্শ

0

কোনো বাড়িতে কেউ যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে পড়েন, স্বাভাবিক কারণেই আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবারেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

নিজে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা আর আক্রান্ত ব্যক্তির শুশ্রূষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব থেকেই মূলত এই আতংক আর উদ্বেগের শুরু।

কিন্তু বাংলাদেশেও এখন সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বিগ্ন না হয়ে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী, প্রত্যেক কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে দুইজনের বেশি মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন।

তবে বিভিন্ন দেশ এবং ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে এই হিসাব কিছুটা আলাদা হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনের কিছু সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।

১. পরিকল্পনা করে ফেলুন :
পরিবারে যখনই কোন একজন ব্যক্তি সংক্রমিত হবেন, আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে দ্রুত একটি পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে, যাতে পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা যথাযথভাবে দেয়া যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলছেন, “এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য আসলে দুটি- প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপনা। এর মানে হলো, যেন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, এবং একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিভাবে আইসোলেট করে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে, দুটোই মাথায় রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে ঝুঁকি পর্যালোচনা করতে হবে।”

এই পরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে হবে বয়স নির্বিশেষে পরিবারের সকল সদস্যকে। সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতে হবে যিনি বয়সে তরুণ এবং শারীরিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ তাকে।

তবে সাধারণত গ্রামাঞ্চলে, কিংবা নিম্ন আয়ের পরিবারে বাড়ির সবাই মিলে বসে পরিকল্পনা করার মতো সচেতনতা কম থাকে, ফলে সেসব জায়গায় কম্যুনিটি বা সমাজের অগ্রসর সদস্যদের এ দায়িত্ব নিতে হবে।

২. আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখুন :
পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়েছেন বুঝলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ির অন্যদের দূরত্ব নিশ্চিত করুন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলছেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইসোলেশনে থাকার বিকল্প নেই।

“তাতে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা একটি ঘরে রাখুন, তার খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধ ঘরের দরজায় দিয়ে রাখলে তিনি সেখান থেকে নিয়ে নিতে পারবেন। খাওয়া শেষে আবার দরজায় দিয়ে রাখলে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে।”

আক্রান্ত ব্যক্তি যে টয়লেটটি ব্যবহার করবেন, সেটি আলাদা হলে ভালো। কিন্তু সম্ভব না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারের অন্তত আধঘণ্টা পরে সেটি অন্যরা ব্যবহার করতে পারবে।

আক্রান্ত ব্যক্তির ঘরে গরম পানি, চা বা স্যুপ জাতীয় পানীয় ও কিছু শুকনো খাবার দিয়ে রাখতে হবে, যেন ওই ঘরটিতে বারবার না যেতে হয়।

৩. অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা মনিটর করুন :
বে-নজির আহমেদ বলছেন, মনে রাখতে হবে কোভিড-১৯ রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। যে কারণে সতর্কতাই সবচেয়ে জরুরি বিষয়।

“এক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা মনিটর করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। উপসর্গ মৃদু হলে বাড়িতে রেখে পরিচর্যা করতে হবে। এজন্য তার তাপমাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা, ব্লাড প্রেশার, অন্য অসুস্থতা থাকলে- সেসবও খেয়াল রাখতে হবে।”

খেয়াল রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর যাতে পানিশূন্য হয়ে না যায়।

শরীরের কোন একটি অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে।

৪. সেবাদানকারীর বিশেষ সতর্কতা :
আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বয়স্ক হন, তাহলে তিনি নিজে নিজে হয়ত সব কাজ করতে পারবেন না, তখন তার ঘরে কাউকে গিয়ে সেবা দিতে হবে।

সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ও যিনি সেবা দেবেন, উভয়েই মাস্ক পরিধান করবেন।

অধ্যাপক শিরিন বলছেন, “সেবাদানকারী যখনই ওই ঘরে যাবেন, মাস্ক ও গ্লাভস পরে যাবেন। দুই মিটার বা ছয় ফুট দূরত্ব রাখার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু খুব কাছে যেতে হলে ফেস শিল্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।”

সেবাদানকারী এমন কাপড় পরে ভেতরে যাবেন যেটা বাইরে এসে সহজে ধুয়ে দেয়া যায়। সম্ভব হলে তিনি গোসল করে ফেলবেন, না পারলে ভালো করে ঘষে ঘষে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় যদি ধুয়ে দিতে হয়, তাহলে সেটি আধা ঘণ্টা সাবান পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ধুতে হবে।

বে-নজির আহমেদের পরামর্শ হচ্ছে, সেবাদানকারী হিসেবে পরিবারে এমন কাউকে বেছে নিতে হবে যার আগে থেকে কোন ধরণের অসুস্থতা নেই এবং যিনি শারীরিকভাবে সক্ষম।

৫. নিজেদের শরীরের খেয়াল রাখুন :
পরিবারের বাকি সদস্যদের নিজেদের শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সংক্রমণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি-না খেয়াল রাখুন।

বাড়ির প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হবার পর থেকে অন্তত ১৪ দিন পর্যন্ত সকলেরই নিজেদের অবস্থা মনিটরিং করতে হবে।

এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মতো বাকি সদস্যদেরও গরম পানি খাওয়া, গার্গল করা এবং বারবার হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

একইসঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর পানি পান করুন। নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করারও পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

৬. জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি রাখুন :
যেকোনো সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হতে পারে, সেই প্রস্তুতি রাখুন।

এজন্য জরুরি ফোন নম্বর হাতের কাছে রাখুন, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি, চিকিৎসক- তাৎক্ষণিকভাবে যাদের প্রয়োজন হবে, তাদের ফোন নম্বর কোথাও লিখে রাখতে পারেন।

টেলিফোন নম্বর জানা থাকলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত কাজে লাগবে।

জরুরি পরিস্থিতির জন্য কিছু টাকা জোগাড় করে রাখুন, যাতে হঠাৎ প্রয়োজনে বিপদে না পড়তে হয়।

৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন :

যেকোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সামাজিক মাধ্যমে দেখা প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করা যাবে না।

তবে অহেতুক ভয় না পাবার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলছেন, রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত পরিকল্পনা থাকলে মহামারি মোকাবেলায় সফল হওয়া যাবে।

সেজন্য প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com