বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঢাকায় বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু জ্বরের রোগী। অক্টোবরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাতজন। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হওয়ার পর বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার ও বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। দ্রুত মশার বংশবিস্তারের উৎস নির্মূল করলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৬০২ জনের। গতকাল ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত দুটি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গিয়েছেন ১৭৯ জন। এ বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব যাচাইয়ে জরিপ পরিচালতি হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। ‘ডিসেমিনেশন অন মুনসুন এডিস সার্ভে-২০২০’ নামের জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ১০০টি এলাকায় (ডিএনসিসি ৪১টি এবং ডিএসসিসি ৫৯টি) দুই হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভেক্টরের ওপর এই জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। জরিপে বলা হয়েছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। তবে উত্তরে ১৭ নম্বর এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়।